![]() |
মেডিকেলে চান্স পাওয়া বাঘার মেয়ে সেই অন্তরার পাশে র্যাব-৫ | সময় সংবাদ |
রাজশাহী প্রতিনিধি :
রাজশাহীর বাঘায় মেডিকেলে চান্স পাওয়া হত-দরিদ্র পিতৃহারা সেই অন্তরার পাশে দাড়ালো র্যাব-৫। জেলার বাঘা উপজেলার চন্ডীপুর গ্রামের হত-দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মোছাঃ অন্তরা খাতুন (২০)। তার বাবা আলা উদ্দীন ১৮ (আঠারো) বছর পূর্বে দূরারোগ্য ব্যাধিতে মারা যায়।
পরবর্তী সময়ে তার মা অন্যের বাড়ীতে কাজ করে ও ভাই দিনমজুরী করে সংসার চালানোর পাশাপাশি তার লেখপড়ার খরচ যোগান দেয়। ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও আর্থিক অনটনের কারণে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় অন্তরার। বিষয়টি অধিনায়ক, র্যাব-৫ এর দৃষ্টি গোচর হয়।
এরই প্রেক্ষিতে ১০ এপ্রিল ২০২২ তারিখ র্যাব-৫ এর অধিনায়কের পক্ষ হতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারুফ হোসেন খান চন্ডীপুর গ্রামে অন্তরার বাড়িতে হাজির হয়ে তার হাতে ভর্তির যাবতীয় খরচ প্রদান করেন।
এ সময় মেডিকেলে চান্স পাওয়া অন্তরা বলেন, আর্থিক অনটনের মধ্যেও নিজের ইচ্ছাশক্তি আর সবার দোয়ায় এ পর্যায়ে পোঁছাতে পেরেছি। কিন্ত আমার পরিবারের পক্ষে মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় করা কষ্টকর হচ্ছিল। বিষয়টি জানার পর র্যাব-৫, রাজশাহী আমাকে ভর্তির টাকা দিয়ে সহযোগিতা করায় আমি অত্যন্ত খুশি এবং কৃতজ্ঞ।
র্যাব-৫, রাজশাহীর উপ-পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) কর্তৃক দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, র্যাব ফোর্সেস আমাদের প্রিয় মাতৃভুমির অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করতে এবং সম্মানিত নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের আলোকে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অসহায় ও দুস্থদের পাশে থেকে আর্থিক ও বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে জনসেবা মূলক কার্যক্রমেও বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে এই এলিট বাহিনী।
জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে অন্তরা যখন উচ্চ মাধ্যমিকে পা বাড়ায় তখনই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। মনোবলকে শক্ত করে এক বুক আশা নিয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হয় নিজ উপজেলার শাহদৌলা সরকারি কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তাছাড়াও পি ই সি ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি, জে এস সি ও এএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।
অন্তরার মা রসুনা বেগম জানান, আমার স্বামী যখন মারা যায়,তখন অন্তরা খাতুনের বয়স ছিল দেড় বছর আর ছেলে সোহেল রানার বয়স ছিল ৭ বছর। সম্বল বলতে ছিল স্বামীর পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া বাড়ি ভিটার আড়াই কাঠা আর মাঠের ৩ কাঠা জমি। তাই জীবনের সাথে সংগ্রাম করে রাইচ মিলে কাজ করা ছাড়াও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ছেলে-মেয়ের খাবার ও লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন। সংসারের টানপোড়ন দেখে সোহেল রানা লেখা পড়া বাদ দিয়ে আমার সাথে নেমে পড়ে জীবন সংগ্রামে। সোহেল রানা সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে।
সাক্ষাৎকারে, জীবনের সাফল্যের কথা তুলে ধরে অন্তরা খাতুন বলেন, নিম্নবিত্ত একটি দরিদ্র পরিবার থেকে এ পর্যন্ত উঠে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এস,এস,সি পাশের পর নিজ উপজেলার শাহদৌলা সরকারি কলেজে এইচএসসি’তে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। ওখানে পড়ার সব টাকা জোগাড় করা আমার মা-ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব ছিলনা।
তাই অনেক কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে, কলেজ শিক্ষক হাফিজুর রহমানের সহায়তায় তারই কোচিং সেন্টারে ছেলে-মেয়েদের ক্লাশ নিতাম। সেখানের সীমিত আয় ও বাড়িতে টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ যুগিয়েছি। মেডিকেলে ভর্তির জন্য ঢাকার রেটিনা মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কোচিং-এ ভর্তি হই। মায়ের পোষা গাভীটি ষাট হাজার টাকায় বিক্রি করে সেখানকার খরচ যুগিয়েছেন।