হোটেলে বান্ধবীর সঙ্গে মিলনে টাকা জোগাড় করতে বন্ধুকে নৃশংস খুন | সময় সংবাদ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, জুন ২৮, ২০২২

হোটেলে বান্ধবীর সঙ্গে মিলনে টাকা জোগাড় করতে বন্ধুকে নৃশংস খুন | সময় সংবাদ

 

"হোটেলে বান্ধবীর সঙ্গে মিলনে টাকা জোগাড় করতে বন্ধুকে নৃশংস খুন | সময় সংবাদ"

বগুড়া প্রতিনিধি


নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চায় ১৬ বছরের কিশোর। ভাড়া করা সেই নারীর সঙ্গে দিনক্ষণ ঠিক করা থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় টাকা। পূরণ হচ্ছিল না মনের ইচ্ছাও। তবে মনের সাধ মেটাতে করা হয় ভয়ংকর পরিকল্পনা। এমন নিষ্ঠুরতায় খুন হলো তারই বন্ধু ১৪ বছরের নওফেল। মজার ছলে বন্ধুকে খুন করে ছিনতাই করে মুঠোফোন। সেই ফোন বিক্রির টাকা দিয়েই ঘনিষ্ঠ হয় ভাড়া করা নারীর সঙ্গে। তবে একা নয়, একই সময় আরেকজনও সেই নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়।


ঘটনাটি বগুড়ার শাজাহানপুরের। নিহত নওফেল উপজেলার দাড়িগাছা হাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মো. ইসরাইল শেখ। সে উপজেলার দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।


১৮ জুন নওফেলকে শ্বাসরোধে ও বাঁশের লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। পরে ২০ জুন সন্ধ্যায় দাড়িগাছা ফুলবাড়ীয়া গ্রামের একটি ঝোপ থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই দিনই মধ্যরাতে বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। নিহতের বাবা মামলাটি করেন বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার এসআই মো. আরিফুল ইসলাম।


নওফেলকে খুনের অভিযোগে ১৬ বছরের ওই কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে ঢাকার ঢাকা টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে নিহত নওফেলের বন্ধু ও একই উপজেলার বাসিন্দা। গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নওফেলকে হত্যার কথা স্বীকার করে সে। এ ঘটনায় কিশোরের ভাড়া করা ওই নারীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম জাকিয়া খাতুন বৃষ্টি। ২০ বছরের বৃষ্টিকে ২১ জুন সন্ধ্যায় নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।


এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।


তিনি জানান, মাস দুয়েক আগে জমি বিক্রির টাকা দিয়ে নওফেলকে একটি স্মার্ট মুঠোফোন কিনে দেন তার বাবা। ওই মুঠোফোনের দাম ১৮ হাজার টাকা। নওফেলের হাতে নতুন ফোন দেখার পর থেকেই তার বন্ধু ১৬ বছরের ওই কিশোর ছক আঁকে ভয়ংকর অপরাধের। নওফেলকে খুন করে তার ফোন নিয়ে করবে বিক্রি। পরে ফোন বিক্রির টাকা দিয়ে ওই নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরিকল্পনা করে ১৬ বছরের এ কিশোর। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেয় ১৮ জুন। কারণ ওই দিন ছিল তার বন্ধু নওফেলের জন্মদিন।


এসপি জানান, ১৮ জুন বেলা ১১টার দিকে নওফেলকে সঙ্গে নিয়ে দাড়িগাছা গ্রামের ফুলবাড়ীয়া গ্রামের একটি জঙ্গলে যায় তার বন্ধু। সেখানে তারা দুজন নিয়মিত ধূমপান করতো। ওই দিনও নওফেলকে ধূমপান করার কথা বলেই সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ধূমপান ও গল্প করার একপর্যায়ে ১৬ বছরের ওই কিশোর নওফেলকে বলে যে- ‘তোমাকে যদি মাফলার দিয়ে সিনেমা স্টাইলে খুন করা হয় তাহলে কেমন হবে’। বন্ধুর মুখে এ কথা শুনে নওফেল বলে যে তুমি তো আমাকে খুন করবে না। এ কথার পরই ওই কিশোর অভিনয়ের ছলে পেছন থেকে মাফলার দিয়ে নওফেলের গলা পেঁচিয়ে ধরে। মাফলারটি আগেই থেকেই নিজের গলায় রেখেছিল ওই কিশোর। পরিকল্পনা অনুযায়ী নওফেলের গলায় শক্ত করে মাফলার পেঁচিয়ে পেছন থেকে টানতে থাকে সে। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যায় নওফেল। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে জঙ্গলে পড়ে থাকা একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে তার মাথায় পরপর দুবার আঘাত করে ওই কিশোর। পরে নওফেলকে খুন করে তার লাশ ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে একটি ঝোপে গুম করে সে।


সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী আরো জানান, বন্ধুকে খুনের পর ওই দিনই বৃষ্টির সঙ্গে দেখা করে কিশোর। পরে তারা দুজন একসঙ্গে দুপুরে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় এসে একটি দোকানে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে নওফেলের মুঠোফোন বিক্রি করে। ফোন বিক্রির টাকা দিয়ে তারা বগুড়া শহরের গালাপট্টি এলাকার হোটেল টুইন ব্রাদার্সে রুম ভাড়া করে ঘনিষ্ঠ হয়। তারা দুই হাজার টাকা দিয়ে হোটেলের রুম ভাড়া নেয়। এ সময় ওই কিশোরের আরেক বন্ধু এসেও বৃষ্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়। সেও কিশোর। পরবর্তীতে ১৬ বছরের অভিযুক্ত কিশোর বৃষ্টিকে ১৫০০ টাকা দিয়ে চলে যায়।


পুলিশ সুপার বলেন, ২০ জুন নওফেলের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই তদন্ত শুরু করা হয়। প্রথমে মুঠোফোন উদ্ধার এবং ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ঢাকা টঙ্গী থেকে ১৬ বছরের ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তী অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলার উদ্ধার করা হয়েছে। নওফেলের লাশ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়, সেখান থেকেই মাফলারটিও উদ্ধার করা হয়েছে।


সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, ওই নারী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অভিযুক্ত কিশোরকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।





Post Top Ad

Responsive Ads Here