
"ছবি তোলায় ব্যস্ত সবাই, দৌড়ে গিয়ে ১১ জনের লাশ বের করেন মোস্তফা | সময় সংবাদ"
চট্টগ্রাম ও মীরসরাই প্রতিনিধি
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর দেড়টা। শুক্রবার হওয়ায় অনেকেই জুমার নামাজ আদায় করছিলেন মসজিদে। সড়কও বেশ ফাঁকা। এর মধ্যেই মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রেন। ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। নিভে যায় একে একে ১১ জনের প্রাণ।
এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটলেও হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি কেউ। উল্টো ছবি-ভিডিও তোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন অনেকে। তবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি মো. মোস্তফা। দৌড়ে গিয়ে মাইক্রোবাস থেকে একে একে বের করেন ১১ জনের লাশ। তাকে সহায়তায় ট্রেনের দুই যাত্রীও এগিয়ে আসেন।
মোস্তফা বলেন, দুর্ঘটনাস্থলের পাশে আমার বাড়ি। ঘটনার সময় রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। দেখি ট্রেনের ইঞ্জিনে ঝুলছে একটি মাইক্রোবাস। এসব দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ি। দৌড়ে বারতাকিয়া রেলস্টেশনের কাছাকাছি ঝিলিপুলে যাই। অনেককে ছবি-ভিডিও করতে দেখে চিৎকার শুরু করি। একাই উদ্ধারকাজ শুরু করি। একে একে সবাইকে বাইরে নিয়ে আসি। তখনো দুজন জীবিত ছিলেন।
তিনি বলেন, জুমার নামাজের সময় হওয়ায় স্টেশনে তেমন মানুষজন ছিলেন না। আমি পরিচিত এক অটোচালককে ফোন দেই। এর মধ্যে স্টেশনের ফরহাদ, ইরান, মিরাজ, ইমন, রিপন, ইমনসহ আরো কয়েকজনের সহযোগিতায় আহত দুজনকে স্টেশনে নিয়ে রিকশার মাধ্যমে মীরসরাইয়ের সেবা হাসপাতালে পাঠাই।
উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসা এ যুবক আরো বলেন, উদ্ধারকাজে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছিলেন ট্রেনের এক যাত্রী। পরে তিনি সেন্সলেন্স হয়ে পড়েন। আরো কজন ট্রেনের যাত্রী সাহায্য করেন। অধিকাংশ মানুষ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছেন। অনুরোধ করার পরও এগিয়ে আসেননি।
তিনি বলেন, স্মৃতিগুলো আর নিতে পারছি না। কতটা ভয়াবহ না দেখলে বোঝা মুশকিল। টুরিস্ট স্পট, রেলক্রসিংসহ সব পাবলিক স্পটের নিরাপত্তায় আরো বেশি নজর দেওয়া উচিত আমাদের। প্রতিটা ক্রসিংয়ে যেন দক্ষ গেটম্যান থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এদিন দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার পূর্ব খৈয়াছড়া গ্রামের ঝরনা এলাকার রেলক্রসিংয়ে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
