রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের ট্রাকে চাঁদা বন্ধের দাবী চালকদের - সময় সংবাদ | SOMOY SANGBAD Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Monday, May 27, 2024

রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের ট্রাকে চাঁদা বন্ধের দাবী চালকদের

  

রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের ট্রাকে চাঁদা বন্ধের দাবী চালকদের
রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের ট্রাকে চাঁদা বন্ধের দাবী চালকদের

রাজবাড়ী প্রতিনিধি: 

রাজবাড়ী জেলার অন্যতম পেঁয়াজের হাঁট সোনাপুর বাঁজার। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এ বাজার থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয় পেঁয়াজ । এ পেঁয়াজ পরিবহণের জন্য প্রতি ট্রাক চালককে গুণতে হয় ৫শত থেকে ২৫ শত টাকা । বাইরের ট্রাক চালক যারা টাকা দেবে তাঁদেরকেই কেবল পেঁয়াজ পরিবহণ করার সুযোগ দেওয়া হয় । বঞ্চিত করা হয় স্থানীয় ট্রাক চালকদের ।


সোনাপুরের পেঁয়াজ হাটে ট্রাক চালকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে রবিবার (২৬শে মে) দুপুরে দেখা যায় বাস্তব চিত্র । বাজারের মধ্যে ট্রাক থাকায় অন্য যানবাহন চলাচল কষ্টদায়ক। ট্রাক থেকে কয়েকজন কে টাকা নিতে দেখা গেছে। প্রশ্ন করার সাথেই সটকে পড়ে কয়েকজন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বারের নেতৃত্বেই টাকা উঠানো হয় । বাজারে সাংবাদিকদের উপস্থিতির টের পেয়ে অনেকেই চলে যান, আবার কিছুক্ষন পর কিশোর বয়সের ১০-১২ জন বাজারে মহরা দিয়ে চলে যায়। আবার শুরু হয় চাঁদা উত্তোলন । 


সোনাপুর থেকে ভৈরভগামী (ঢাকা মেট্রো -ভ) ট্রাক চালক মুন্নাফ জানান, পাঁচ বছর ধরে ট্রাকে পেঁয়াজ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাই। আজকে ভৈরভ যাচ্ছি । বাঁজারে ট্রাকপ্রতি ৫শত টাকা দিতে হয় । বড় গাড়ীর চালকদের ১৫শত ২হাজার টাকা দিতে হয় । টাকা নেয় কিন্তু কোন রশিদ দেয় না । আমরা চাই এ চাঁদা বন্ধ করা হোক। আমরা দূর থেকে আসি ,চাঁদা না দিয়ে যেতে পারিনা। বাধ্য হয়েই চাঁদা দিতে হয়। 


পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক চালক শাকিল জানান, ট্রাক বোঝাই  পেঁয়াজ নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। বাজারে কোন টাকা দিতে হয়েছে কিনা প্রশ্নে তিনি জানান, লেবার খরচ ৩শত, অফিস খরচ ৩শত দালালদের ৪শত মোট ১হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এ চাঁদা দেওয়া বন্ধ হলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হয়। আমরা গরীব মানুষ। আমাদের ১টাকা ই অনেক টাকা । 


সোনাপুর থেকে পেঁয়াজ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যান ট্রাক চালক খন্দকার সুজন। তিনি জানান, ৮শত থেকে ১২শত টাকা দিতে হয় ট্রাক প্রতি । এগুলো যদি না দেওয়া লাগতো আমাদের অনেক উপকার হতো । আমরা গরীব মানুষ ট্রাক চালায়ে খাই। আমাদের উপর এটা জুলুম । 


আরেক ট্রাক চালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ট্রাকের মাল বা পেঁয়াজ অনুযায়ী টাকা দিতে হয় অফিস কে । ৮শত থেকে ১২ শত ২হাজার এমন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দিতে হয় অফিসে । টাকা না দিলে গাড়িতে পেঁয়াজ ই উঠবেনা । চাঁদা যদি বন্ধ করতে পারেন আপনারা আপনাদের জন্য দোয়া করব ভাই । ' 


সোনাপুর বাজারের ইজারাদার ও নবাবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক  সম্পাদক বেলাল আহমেদ  বলেন প্রতিটি ট্রাক থেকে ২-৩ হাজার টাকা নিয়ে চালকদের হয়রানী করা হয় ,আমি বাজারের ইজারাদার আমাকেও বিষয়টি জানায়নি ,স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বার সহ কয়েকজন এখানে ট্রাক চালকদের জিম্মি করে টাকা নেয় । তাদের একটা সংগঠন ছিলো ট্রাক ০২ ট্রাক সমিতি যা গত বৈশাখ মাসে মেয়াদ শেষ । কিসের ভিত্তিতে  টাকা নিচ্ছে আমার সাথে কোন আলাপ করেনি। এভাবে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে ট্রাক চালকদের থেকে। আমরা চাই এগুলো বন্ধ করা হোক। 


এ বিষয়ে মাঝবাড়ীর খায়রুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ট্রাক থেকে ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বার তার লোকজন দিয়ে ২-৩ হাজার টাকা আদায় করে । এর আগে টাকা না দেওয়ায় কয়েকজন ট্রাক চালককে মারধর করেছে। এ নিয়ে স্থানীয় আতিয়ারের দোকানে শালিশ হয়েছে। এরপর থেকে এই ট্রাক চালকেরা এ বাজারে আর আসেন না । এরকম চাঁদাবাজি হলে সোনাপুর বাজারের ঐতিহ্য হারাবে। আমরা চাই এই চাঁদাবাজি বন্ধ করা হোক । 


সরেজমিনে জানাগেছে, স্থানীয় কোন ট্রাক চালককে এখান থেকে পেঁয়াজ বা কোন পণ্য পরিবহণের সুজোগ দেওয়া হয় না । জেলার বাইরের সব ট্রাক এখান থেকে পেঁয়াজ নিয়ে যায়, স্থানীয় ট্রাক চালকেরা এ উপার্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। স্থানীয় চালকের মধ্যে যারা ছিলেন তারা টাকা না দেওয়ার কারনে মারধরের শিকার হয়েছেন। এখন যে সকল চালক রয়েছেন তারা অধিকাংশই বাইরের।  


এ বিষয়ে স্থানীয় ট্রাক চালক মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস মধু জানান, আমার নিজস্ব একটা ট্রাক আছে । আমি আগে এখান থেকে পেঁয়াজ আনানেওয়া করতাম । আমার কাছে ৩ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয় আমি না দিলে বছর দুই হলো আমাকে এখান থেকে পেয়াজ নিতে দেয়না । স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বার ,আকশ, হিরু আমাকে মারধর করে । এ নিয়ে ১০ই মার্চ ২৪ তারিখে আমি কালুখালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। 


স্থানীয় আক্তার ড্রাইভার বলেন, আমার নিজস্ব ২টা ট্রাক আছে। এ বাজারে আসলে দালালী  ২হাজার ২৫শত টাকা তাদের দিতে হয়। ভাড়া পাই আর না পাই। আগে ওদের টাকা দিতে হবে। এর পর থেকে আমি বাইরের মালামাল পারাপার করি। এ নিয়ে কোন কথা বললে আমাদের উপর তারা চড়াও হয় ।  


সোনাপুরের ট্রাক চালক নুরুল আমিন বলেন, আমার একটা ট্রাক আছে ৭০৯, আমাকে এখান থেকে পেঁয়াজ এর ভাড়া মারতে দেওয়া হয়না চাঁদার টাকা না দেওয়ার কারনে। স্থানীয় হাবিল মেম্বার তার লোখন দিয়ে এর আগে দিনে দুপুরে আমাকে অটোতে করে তুলেনিয়ে মারধর করেছে।  আমি মামলা করেছি। তাদের চাপে শেষ পর্যন্ত মামলা উঠিয়ে নিতে হয়েছে। হাবিল মেম্বার ও তার দলবল এখানে খুব প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তার উপর নির্যাতন চালানো হয় । 


কারা এ টাকা উঠায় ,এমন প্রশ্নে আক্তার ড্রাইভার বলেন ০২ ট্রাক সমিতি নামে একটা সমিতি তারা রাজবাড়ী থেকে এখানে এনে অফিস নিয়েছে । সেই অফিসের নামেই চাঁদাবাজি করছে। তাদের ভয়ে এলাকার কেউ কথা বলতে পারেনা । হামলা,মামলা ও পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বার। 


এ বিষয়ে টাকা উত্তোলনকারী হিরু বিশ্বাস জানান, ট্রাক সমিতি ০২ এর নামে টাকা উত্তোলন করা হয়। ট্রাক প্রতি ৫শত থেকে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়, এর বেশি নেওয়া হয় না । যারা বেশি টাকা নেওয়ার কথা বলছে তারা মিথ্যা করা বলছে। 


ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বারে সাথে তার অফিসে বসে কথা হলে তিনি তার মোবাইল থেকে ০২ ট্রাক শ্রমিক এর একটি কমিটির তালিকা দেখান। যেখানে উপদেষ্টা রয়েছেন হাবিল মেম্বারসহ ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নামের তালিকা। তিনি জানান, ০২ ট্রাক সমিতির নামেই এ চাঁদা উত্তোলন করা হয়, এখানেই না সারা বাংলাদেশেই হয়। 'তবে ক্যেমেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজী হননি তিনি । 


ট্রাকপ্রতি চাঁদা আদায় নিয়ে কথা হয় রাজবাড়ী জেলা ০২ ট্রাক শ্রমিক এর সহ সভাপতি হাশেম বলেন, সোনাপুর ইউনিয়নে ট্রাকে সমিতি'র নামে যে চাঁদা উঠানো হচ্ছে তা অবৈধ। কারন তাদের কমিটি বছর খানেক আগেই মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে গেছে। 


এ বিষয়ে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত সরকার বলেন,  অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে । 


তথ্য সূত্রে জানাগেছে, রাজবাড়ীর এ সোনাপুর বাজারে ৭০-৮০ জন পেঁয়াজের আড়ৎদার রয়েছেন।  সপ্তাহে ৩দিন রবিবার, মঙ্গলবার ,বৃহস্পতিবার বসে পেঁয়াজের হাট। প্রতি হাটে ১০০ থেকে ১৫০টি ট্রাকে দেশে বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ পরিবহণ করা হয় । যদি প্রতি হাটে ১০০ ট্রাক থেকে নিম্নে ১হাজার টাকা নেওয়া হয় তাহলে অঙ্কের পরিমান দাড়ায় ১লক্ষ টাকা । সাপ্তাহে ৩দিন হাট মোট ৩লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয় । কার কাছে যায় এ টাকা ' ?


No comments: