![]() |
| চকরিয়ার চিংড়ি খাতে নিরাপত্তা সংকট: শিল্প পুলিশ ইউনিট স্থাপনের দাবি |
মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সরকারঘোষিত চিংড়িজোনে দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে একটি শিল্প পুলিশ ইউনিট (ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ইউনিট) প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মৎস্য চাষিরা।
ফিস ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফোয়াব) নামে মৎস্য চাষিদের সংগঠন সরকারের কাছে এই দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা চিংড়িজোনের ৫৮৭টি প্লট বহিরাগত বিত্তশালীদের বরাদ্দ বাতিল করে স্থানীয় প্রশিক্ষিত চাষিদের নামে পুনরায় বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দীর্ঘ চার দশক ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা দখলবাজ চক্রের হাতে স্থানীয় চাষিরা জিম্মি হয়ে আছেন।
ফোয়াবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চিংড়িজোনে এখন “পেশিশক্তি, দখল-বেদখল, জো-ভিত্তিক চাঁদাবাজি ও হামলা-লুটের ঘটনা নিয়মে পরিণত হয়েছে।” ক্ষমতা পাল্টালেই নতুন প্রভাবশালীরা এসে নৈরাজ্য চালায়। ফলে ঘের মালিকেরা বাধ্য হয়ে চুক্তিভিত্তিক চাষে যেতে হচ্ছে।
ফোয়াবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চকরিয়া উপজেলার নির্বাচিত সেরা মৎস্য চাষি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “চকরিয়ার এই চিংড়িজোন বাংলাদেশের একমাত্র সরকারঘোষিত চিংড়ি শিল্প এলাকা। বর্তমানে ৪০ হাজার একরেরও বেশি জমি নিয়ে এটি বিশাল উৎপাদন খাতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা ও সরকারি সহায়তার অভাবে চাষিরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাচ্ছেন না।”
তিনি আরও বলেন, “এই চিংড়িজোন এখন একটি শিল্প খাতে পরিণত হয়েছে, যার উৎপাদিত মাছ রপ্তানি হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। তাই এখানকার চাষিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে শিল্প পুলিশ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।”
প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৮৫ সালে সরকার ১০ থেকে ১১ একর আয়তনের ৫৮৭টি চিংড়ি প্লট চকরিয়ার বাইরের বিত্তশালীদের বরাদ্দ দেয়। কিন্তু তাদের মাছ চাষের কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। এই বহিরাগতরা স্থানীয় চাষিদের কাছে “লাগিয়ত” (ভাড়া) দিয়ে প্রতি বছর বিপুল অর্থ উপার্জন করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা হামলার সময় কোনো দায়িত্ব নেয় না।
ফোয়াবের দাবি, এসব প্লট বাতিল করে চকরিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা, অনগ্রসর পরিবার ও প্রশিক্ষিত চাষিদের নামে পুনরায় বরাদ্দ দিতে হবে।
গত ২৬ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এবং মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবদুর রউফ চকরিয়া চিংড়িজোন পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ফোয়াবের ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল ইসলাম তাদের কাছে লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
ফোয়াবের প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে—
-চিংড়িজোনে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সম্প্রসারণ
-খাল খনন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন
-মৌসুমভিত্তিক সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান
-মানসম্মত পোনা সরবরাহ ও প্রদর্শনী প্লট স্থাপন
-মো. শহিদুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করেন,
“সরকার যদি এসব উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে চকরিয়ার চিংড়িজোনে আবারও সোনালী দিন ফিরে আসবে।”

