ধান খেতে কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশুটির নাম আবরার ফাহাদ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

সোমবার, অক্টোবর ২১, ২০১৯

ধান খেতে কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশুটির নাম আবরার ফাহাদ



সময় সংবাদ ডেস্ক//
তাড়াইলে ধান খেতে পাওয়া সদ্য জন্ম নেয়া ফুটফুটে সেই ছেলে শিশুটিকে আজিমপুরের ‘ছোটমণি নিবাস’ এ পাঠানো হচ্ছে।

রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ওবায়দা খানম শিশুটিকে আজিমপুরের ‘ছোটমণি নিবাস’এ পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেন। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর বিকালে শিশুটিকে সেখানে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়।

তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড এর প্রধান মো. তারেক মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর আজই (রোববার) শিশুটিকে ‘ছোটমণি নিবাস’ এ পাঠানো হচ্ছে। শিশুটির পরিচর্যা ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়ার জন্য তারা ১১টি লিখিত আবেদন পেয়েছিলেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) তাড়াইল উপজেলার পুরুরা গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ধান ক্ষেত থেকে এই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, জন্মেও পর পরই শিশুটিকে তার মা ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে পুরুরা গ্রামের সুফিয়া খাতুন নামের এক মহিলা কাজ করতে গিয়ে বাড়ির পাশে এক শিশুর কান্না শুনতে পান। আঁচ করতে পারেন বাড়ির পাশে দূরের ধান ক্ষেত থেকে কান্নার শব্দটি আসছে। এগিয়ে যান তিনি। সামনের উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ধান ক্ষেতে নেমে দেখেন শিশুটি কাদা-পানিতে পড়ে আছে। হাত-পা নাড়াচ্ছে। কাঁদছে।

ধান ক্ষেতে মানবশিশুকে পড়ে থাকতে দেখে সুফিয়া খাতুনের চোখ ছল ছল করে ওঠে। পরম মমতায় তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শিশুটির সেবা-শুশ্রুষা করতে থাকেন।

ধান ক্ষেতে নবজাতক পাওয়ার খবরে এরপর এলাকার শত শত মানুষ সুফিয়া খাতুনের বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন।
তাড়াইল থানার পুলিশ খবর পেয়ে শিশুটিকে তাদের নিজের জিম্মায় নিয়ে আসেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের তত্বাবধানে রাখেন।

তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তখন ভর্তি রেজিস্টারে শিশুটির নাম লেখা হয় বুয়েটে ছাত্রলীগের হাতে নিহত ছাত্রের নামানুসারে ‘আবরার ফাহাদ’।

জানা গেছে, শিশুটিকে পাওয়ার পর থেকে অনেকেই দত্তক নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। সুন্দর চেহারার এ ই শিুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য দুই শতাধিত দম্পতি প্রশাসনের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।

তাড়াইল থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান জানান, উদ্ধারের সময় শিশুটির বয়স একদিন বা দেড়দিন ছিল। শিশুটিকে তাদের তাড়াইল হাসপাতালের পরিচর্যায় রাখা হয়েছিল। শিশুটির কোন স্বজন না থাকলেও উদ্ধারকারী নারী সুফিয়া খাতুন পরিচর্যার পাশাপাশি শিশুটির প্রতি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখেন। চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের পরম মমতা ও ভালোবাসায় শিশুটি এখন প্রাণোচ্ছ্বল। তার কচি মুখে ফুটেছে হাসি।

রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে আদালত থেকে শিশুটিকে আজিমপুরের ‘ছোটমণি নিবাস’ এ পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী শিশুটিকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে।

রোববার তাড়াইল উপজেলায় গিয়ে দেখা যায় শিশুটিকে ধান ক্ষেত থেকে যিনি উদ্ধার করেছিলেন সেই সুফিয়া খাতুন চিৎকার করে কাঁদছেন। তিনি বার বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাগলের মতো ছুটাছুটি করছিলেন। হাসপাতালে শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন। বার বার কোলে নিচ্ছিলেন। কপালে গালে চুমো খাচ্ছিলেন। সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার বাবা আবরার ফাহাদ যেন ভালো থাকে, সে যেন অনেক বড় মানুষ হতে পারে, সবাই দোয়া করবেন।’

Post Top Ad

Responsive Ads Here