নিরেন দাস(জয়পুরহাট)প্রতিনিধিঃ
সন্ত্রাস, মাদক, জুয়ার মত চক্রবৃদ্ধিহার সুদে দাদন ব্যবসায়ী কোন অংশে কম নয়। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানে নামা উচিৎ বলে মনে করেন সুশীল ও যুব সমাজ সহ আপাময় জনসাধারণ। জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলায় চক্রবৃদ্ধি সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে ফলে টাকার গরমে যা ইচ্ছে তাই করছেন এরা।
সামান্য পুঁজি নিয়ে দাদন ব্যবসা শুরু করে আজ অনেকেই কোটিপতি বনে গেছেন। অনেকেই আবার এদের খপ্পরে পড়ে ব্যবসাবাণিজ্য, ভিটেমাটি ও সয়সম্বল সব হাড়িয়ে দেশান্তরি হয়ে গেছেন।
দেশের উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সুদ, ঘুষ আর দুর্নীতি।এনজিও, ব্যাংক, বীমার বাৎসরিক সুদের হাড় ১৫-২০% টাকা। যথা সময়ে এই সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়েছে এটা নিশ্চয়ই কারও অজানা নাই। এনজিও, ব্যাংক, বীমার সুদের চাইতে শতগুণ উপরেই দাদন ব্যবসা। এন্টি ভাইরাসের মতো এরা দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা সমাজের কেহই। এরা সমাজ, দেশ ও জাতীর জন্য খুবই ভয়ংকর।
সন্ত্রাস, মাদক ও জুয়ার মতো এখনেই এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা না গেলে সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। বলে মনে করেন জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরের আপাময় জনসাধারণ। চক্রবৃদ্ধি সুদে দাদন ব্যবসা সমাজের জন্য ক্ষতিকর- সন্ত্রাস, মাদক জুয়ার মতো কোন অংশে কম নয়। একদিকে এরা বিপদে পড়া অভাবগ্রস্ত অসহায় মানুষের রক্ত তিলে তিলে চুষে খাচ্ছে। অপর দিকে এরা মহান আল্লাহ তায়ালার আইনকে না মেনে, তার সাথে যুদ্ধ করছেন। কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি, নেতাকর্মীর বিপদে আর জনপ্রতিনিধির নির্বাচনে দাদন ব্যবসায়ীরা সবচাইতে বেশি টাকা ডোনেট করে থাকেন। ফলে সমাজে এদেরই দাফটও বেশি। ঐসব নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি এদের কথায় উঠবস করে থাকেন।
আইনগত কোন কঠিন ঝামেলা না থাকায় এই ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে জেলার স্বর্ন ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ী সাধারণ ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী, ডিলার ব্যবসায়ী, ইউপি সদস্য, চাকরীজীবি রাজনীতিবিদ, নারী সহ কয়েক হাজার লোক এই ব্যবসায় জড়িত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাদন ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষে থাকা আক্কেলপুর পৌর সদরের সিদ্ধির মোড়ের বাসিন্দা সৈয়দ আরিফুল হুদা মাসুম,আক্কেলপুর পুরাতন বাজারের বাসিন্দা কৃষ্ণ কুমার সাহা ছোটন, বিশ্বানাথ আগড়ওয়ালা,আক্কেলপুর হাজিপাড়ার বাসিন্দা লক্ষী রানী,আক্কেলপুর বিহারপুরের টগর সাহা সহ আরও অসংখ্য দাদন ব্যবসায়ীরা আবারো মাথা চারা দিয়ে উঠেছেন। এদের বিরুদ্ধে বগুড়া দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করা হলে ততকালীন আক্কেলপুর থানা ওসি সিরাজুল ইসলাম এসব দাদন ব্যবসায়ীদের গুডাউন সহ দাদন ব্যবসা বন্ধ করতে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু করলে তার আতংকে ওইসব দাদন ব্যবসায়ী আত্মগোপন সহ দেশ ছেড়েও পালিয়ে গিয়েছিলেন,পরে থানায় যোগদান করেন ওসি কিরণ কুমার রায় আবারো প্রবেশ শুরু হয় সেসব দাদন ব্যবসায়ীদের যাদের প্রতিমাসের মাসোয়ারার টাকায় চলতো থানার বিভিন্ন সাজসজ্জা, যাহা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওইসব দাদন ব্যবসায়ীরা টাকা সুদের টাকার বিনিময়ে পুলিশ একজন এসআই কে হাতে রেখে বিভিন্ন ভাবে ছয় কে নয়, নয় কে ছয় বানিয়ে ফেলছেন তারা।
এমন অভিযোগ তুলে বারবার মাদক মামলায় হয়রানী মূলক গ্রেপ্তারের শিকার আরমান হোসেন জামিনে এসে প্রতিবেদক কে দাদন ব্যবসায়ী ও মাদক চোরাকারবারীদের অর্থ দিয়ে সহযোগীতা কারি সৈয়দ আরিফুল হুদা মাসুমের বিভিন্ন গোপন তথ্য প্রকাশ করেছেন যে তথ্য গুলো রেকর্ড সহ প্রতিবেদক প্রমাণ সাপেক্ষে রেখেছেন।তা পরবর্তী প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হবে।
অপরদিকে পুরো উপজেলা ঘুরে দেখা যায় তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না- রিক্সা ওয়ালা, দিনমকজুর, কৃষক, ছাত্র- শিক্ষক, চেয়ারম্যান, মেম্বার, ঠিকাদার, রাজনীতিবিদ, চাকরীজীবিসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা। দাদন ব্যবসা পরিচালনা করার সুবিধার্থে কিছু অসাধু নেতা, কর্মী আর জনপ্রতিনিধিকে ব্যহার করেন তারা। ফলে এরা অত্যন্ত ক্ষমতাধর আর প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেহই প্রতিবাদ করার সাহস পান না। অনেকেই আবার তাদের খপ্পরে পড়ে ব্যবসাবাণিজ্য, ভিটেমাটি ও সয়সম্বল সব হাড়িয়ে দেশান্তরি হয়ে গেছেন।
দাদন ব্যবসার ধরণও ভিন্নরুপ-চুক্তি ভিত্তিক, দিন কিস্তি, সাপ্তাহিক কিস্তি ও মাসিক কিস্তি। তবে মাসিক কিস্তির চাইতে চুক্তি ভিত্তিক আর দিনকিস্তিতে সুদের হাড় সর্বোচ্চ। চুক্তি ভিত্তিতে সকালে কেউ ১ লক্ষ টাকা নিলে বিকালে বা রাতে ১ লক্ষ ২/৩ হাজার টাকা দিতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে সুদের হাড় দ্বিগুণ দিতে হবে। দিনকিস্তিতে সর্বমোট মাসিক সুদের হাড় লাখে ৩০ হাজার থেকে ৬০ টাকা। মাসিক কিস্তিতে সুদের হাড় ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
চক্রবৃদ্ধি সুদে সাধারণ টাকা নেন, শিক্ষা, চাকরী, চিকিৎসা, পাওনাদার টাকা পরিশোধের টাকার জন্য বিপদে পড়ে অসহায় মানুষজন। বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার ব্যাংকে ডিডি বা টিডি করার সময় ঘন্টা চুক্তিতে চক্রবৃদ্ধি সুদে টাকা নেন। ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মাসের শেষে টার্গেট পুরনে ব্যর্থ হলে মোটরসাইকেল বন্ধন রেখে চক্রবৃদ্ধি সুদে টাকা নিয়ে থাকেন। অনেকেই আবার দাদন ব্যবসায়ীর সুদের চাপে তাদের মোটরসাইকেল ও চাকরী ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে স্বর্ণ অফিরত যোগ্য। এই শর্তে স্বর্ণ জমা রাখেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। মাসিক ১৫-২০% সুদে স্বর্ণের বাজার মুল্যের ৫০% টাকা দাদনে দিয়ে থাকেন। দাদন ব্যবসায়ীরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক আর আধাসরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাক্ষরযুক্ত চেকবহি জমা রেখে মাসিক ১৫/২০ সুদে দাদনে টাকা দিয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে দাদন ব্যবসায়ীর যোগসাজশ থাকে। ফলে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করার অন্য কোন উপায় থাকেনা।
সাধারন ব্যবসায়ীদেরকে নন জুডিশিয়াল সাদা স্টাম্প, ফাকা চেকে সাক্ষর নিয়ে চক্রবৃদ্ধি সুদে দিন কিস্তিতে টাকা দেন দাদন ব্যবসায়ীরা। কোন ব্যবসায়ীর নিয়মিত সুদের টাকা দিতে না পারলে বা তার কাছে টাকা বেশিদিন পড়ে থাকলে তাকে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ দিতে হবে। এতে যদি কেউ ব্যর্থ হন, তাহলে সাক্ষরযুক্ত সাদা স্টাম্প বলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হন দাদন ব্যবসায়ী। এই সময় স্টাম্পে সাক্ষী হিসাবে সাক্ষর করেন অন্যান্য দাদন ব্যবসায়ীগন।
অটো রিকশা, মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর মালিকদেরকে গাড়ির মুল কাগজপত্র সাদা স্টাম্পে সাক্ষর নিয়ে ২০-৩০% সুদে নির্দিষ্ট। আরও বিস্তারিত আসিতেছে।