ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
লাঠি হাতে নিয়ে পানিতে নেমেছেন সন্তোষ কুমার। হাতড়ে হাতড়ে তুলছেন কলমি শাক। দু’চোখের একটিতেও দেখতে পান না। হাতরে হাতরে তুলছেন শাক। এগুলো বাজারে বিক্রির পর তার খাবার জুটে। প্রতিদিন এভাবে কলমি শাক তুলে জীবন চলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তোষ কুমারের। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন দিঘী, জলাশয়-ডোবা, খাল-বিলে এভাবেই শাক তুলতে দেখা যায় ৬০ বছর বয়সী সন্তোষ কুমারকে।
সন্তোষ কুমার প্রতিদিন এভাবে পানিতে নেমে কলমি তুলে বিক্রি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা আয় করেন। আর এটা দিয়েই তার দুপুর ও রাতের খাবারের টাকা হয়। সকালে শুধু বিস্কুট আর চা খেয়ে পার করেন। পরের দিন আবার একই নিয়ম। কারো কাছে হাত পাততে পারেন না, তাই প্রতিবন্ধী হয়েও কষ্ট করে কলমিশাক তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সন্তোষ কুমার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সানবান্ধা গ্রামের মৃত রামরুপ বিশ্বাসের ছেলে। এক সময় অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার ভালোই চলতো তার। এখন আর গ্রামে কিছুই নেই। ছেলের চিকিৎসায় ভিটাবাড়িও বিক্রি হয়ে গেছে। তার প্রথম স্ত্রী শেফালী বিশ্বাস অভাবের কারণে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীও তার সাথে থাকেন না। দ্বিতীয় স্ত্রী কল্পনা বিশ্বাস কালীগঞ্জ শহরে একটি হোটেলে থালা-বাটি পরিষ্কারের কাজ করেন। স্বামী সন্তোষ কুমারের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেন না তিনি।
সন্তোষের বড় ছেলে সঞ্জয় কুমার বিশ্বাসকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। ছোট ছেলে সুমন বিশ্বাস অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। ভীটাবাড়ি যা ছিল ছোট ছেলের চিকিৎসার সময় বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের একমাত্র মেয়ে শ্যামলী বিশ্বাস বিয়ের পর শশুর বাড়ী আছে।
বর্তমানে তিনি কালীগঞ্জ শহরে নদীপাড়ায় অন্যের জায়গায় বসবাস করেন। বেশ কয়েক বছর হলো তিনি দু’টি চোখের একটিতেও দেখতে পারেন না। এ জন্য ঠিকমতো কাজও করতে পারেন না। সকালে বের হন দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়িতে ফেরেন। অনেক দিন রাতের খাবার হয়, আবার অনেক দিন হয় না। সন্তোষ কুমারের ভাষায় অন্য কোনো কাজ করতে না পেরে তিনি এই কলমি তুলে বিক্রি করার কাজ বেছে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্না রাণী সাহা জানান, এ জাতীয় মানুষের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচি রয়েছে। তিনি যোগাযোগ করলে এই কর্মসুচির মাধ্যমে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

