টাঙ্গাইলে অন্ত:স্বত্তা কিশোরীকে বিয়ের পাঁচদিন পরই তালাক! - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯

টাঙ্গাইলে অন্ত:স্বত্তা কিশোরীকে বিয়ের পাঁচদিন পরই তালাক!


জাহাঙ্গীর আলম, টাঙ্গাইল//
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তারাবাড়ী গ্রামে এক কিশোরী ধর্ষণের পর ছয় মাসের অন্ত:স্বত্তা হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানা ফন্দি-ফিকির করছে। প্রভাবশালীদের অপতৎপরতার জের হিসেবে অন্ত:স্বত্তা ওই কিশোরীর প্রেমিক পাশের ব্রা²ণকুশিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে নাহিদুল ইসলাম বিয়ের পাঁচ দিনের মাথায় তালাক দিয়েছে। 

জানাগেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তারাবাড়ী গ্রামের ভ্যানচালকের মেয়ের(১৪) সাথে পাশের ব্রা²ণকুশিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সাথে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রসুলপুরের জামাই মেলায় পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রধরে প্রেম ও ঘনিষ্ঠতা এবং এক পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ওই কিশোরী অন্ত:স্বত্তা হয়ে পড়ে। স্থানীয় পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় গত ৮ নভেম্বর(শুক্রবার) অবৈধ মেলামেশার সময় এলাকাবাসী তাদের আটক করে। পরে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে গালা ইউনিয়ন কাজী আ. হাইয়ের মাধ্যমে দুই লাখ এক টাকা দেনমোহরানায় কাবিনমূলে গভীর রাতে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর ওই রাতেই প্রেমিক নাহিদুল ইসলাম পরিবারের সাথে বাড়ি চলে যায়। বিয়ের পাঁচদিন পর গত ১৩ নভেম্বর(বুধবার) টাঙ্গাইল পৌর সভার ১০নং ওয়ার্ডের কাজী হজরত আলীর মাধ্যমে নাহিদুল ইসলাম(১৮) ওই কিশোরীকে তালাকের নোটিশ দেন। তালাকের নোটিশ পেয়ে অসহায় অন্ত:স্বত্তা কিশোরী ও তার হতদরিদ্র পরিবারে অমানিষা নেমে আসে। 

সরেজমিনে জানা যায়, বাবা ভ্যান চালকের চার মেয়ে এক ছেলের মধ্যে ওই কিশোরী সবার ছোট। তিনি মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে হতদরিদ্র বাবা বেতন দিতে না পারায় পাশের খলদবাড়ী দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে একই কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ওই কিশোরী জানায়, আল্লাহ-রসুলকে সাক্ষী রেখে বিয়ের প্রলোভনে নাহিদ তাকে বার বার ধর্ষণ করেছে। বর্তমানে তিনি ছয় মাসের গর্ভবতী। গর্ভবতী হওয়ায় নিজের ইচ্ছায়ই বিয়ে করে। কিন্তু পরিবারের চাপে নাহিদ তাকে তালাকের নোটিশ দিয়েছে।

কিশোরীর বাবা জানান, বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়ে তিনি অতিকষ্টে সংসারের ঘানি টানছেন। অন্ত:স্বত্তা মেয়েকে নিয়ে এখন তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তালাকের নোটিশ দেয়ার পর তিনি টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। দুই দফায় পুলিশ এলাকায় গিয়ে তদন্ত করলেও মামলাটি এখনো এফআইআর হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

স্থানীয় সাবেক পুলিশ কনস্টেবল সুরুজজামান জানান, পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র। মানবিক কারণে তিনি ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে মেয়েটিকে যে ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করবেন। 

নাহিদের আত্মীয় ও কান্দুলিয়া গ্রামের মাতব্বর সিদ্দিক হোসেন জানান, বিয়ের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে তালাকের নোটিশ দেয়া সঠিক হয়নি। কোন বেআইনী কাজকে তিনি কোনদিন সমর্থন করেননি, এ বিষয়েও করবেন না। 

নাহিদের মা মোছা. নাছিমা আক্তার প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে জানান, বিয়ের পর মেয়েটি গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তালাকের নোটিশ দেয়া হয়েছে। তার ছেলের বয়স কম তাই ভুল করেছে।

গালা ইউনিয়নের কাজী(বিয়ে/তালাক রেজিষ্ট্রার) আ. হাই জানান, উভয় পরিবারের লোকজন এসে অনুরোধ করায় তিনি বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছেন। মেয়ের বয়স প্রমাণের সুযোগ পাননি। তিনি আরো জানান, এ ধরণের বিয়ে তিনি আগেও রেজিষ্ট্রি করেছেন। কোন ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হলে ডিআরের(জেলা রেজিষ্ট্রার) মাধ্যমে তিনি মোকাবেলা করবেন। 

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের কাজী হজরত আলী জানান, বিবাহিত পুরুষের যৌক্তিক কারণে তালাক দেয়ার অধিকার রয়েছে। একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে নাহিদ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তিনি ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(১) উপধারায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ প্রদান করেছেন। এটা তালাক নয়, নোটিশ।

টাঙ্গাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, কিশোরীকে ধর্ষণের বিষয়টি বিয়ে করে নাহিদুল ইসলাম বৈধ করেছে। তালাক দেয়ার পর থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Post Top Ad

Responsive Ads Here