প্রলোভনে নারী পাচার, দুবাইয়ে চট্টগ্রামের তিন ভাইয়ের মধুচক্র - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০

প্রলোভনে নারী পাচার, দুবাইয়ে চট্টগ্রামের তিন ভাইয়ের মধুচক্র


সময় সংবাদ ডেস্ক//
আজম খান, নাজিম খান ও এরশাদ খান। তারা তিন ভাই থাকেন দুবাইতে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বাবার নাম মাহবুবুল আলম। ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পাচার করেন এ তিন ভাই। সম্প্রতি দুই সহযোগীসহ সিআইডির হাতে গ্রেফতার হন আজম।

গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে আসে দুবাই, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সুন্দরী নারীদের নিয়ে আজম ও তার দুই ভাইয়ের মধুচক্রের তথ্য। এছাড়া নারী পাচারে তাদের এজেন্ট হিসেবে দেশের বিভিন্নজনের সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যায়।


এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গ্রেফতার করে সিআইডি। মানবপাচারের অভিযোগে শনিবার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরার আদালত।

সিআইডি জানায়, ইভান শাহরিয়ার সোহাগ নাচের আড়ালে নারী পাচার করতেন। ‘সোহাগ ড্যান্স ট্রুপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। দেশ থেকে নারী পাঠানোর পাশাপাশি নাচের দল নিয়ে প্রায় সময় দুবাইয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন তিনি। ফেরার সময় কৌশলে কিছু মেয়েকে রেখে আসতেন ইভান শাহরিয়ার। নারী পাচারে এটি একটি অভিনব কৌশল ছিল তার।

জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের কনস্যুলার জেনারেল অফিসের সহায়তায় দুবাইয়ে আজম খানের সিটি টাওয়ার হোটেল থেকে চট্টগ্রামের এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। এরপর দেশে ফিরে সিআইডিকে এ সংক্রান্ত তথ্য দেন ওই কিশোরী।

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ওই কিশোরী জানান, এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ইভান শাহরিয়ারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাকে দুবাইয়ের হোটেলে ভালো বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন ইভান শাহরিয়ার। এতে রাজি হওয়া মাত্রই কিশোরীকে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন দুবাইয়ে নারী পাচারের গডফাদার আজম খানের ভাই নাজিম খানের সঙ্গে। এরপর তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দুবাই পাড়ি জমান ওই কিশোরী।


তিনি আরো জানান, হোটেলের জানালাবিহীন বদ্ধ একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল তাকে। ওই কক্ষে তার মতো আরো ২০ জন নারী ছিল। রাত হলেই যেন শুরু হতো তাদের দিন। রাত নয়টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত হোটেলের বলরুমে আরবি, হিন্দি ও ইংরেজি গানের সঙ্গে নাচতে হতো তাদের। এছাড়া বলরুমে আসা কোনো অতিথি চাইলে তাদের সঙ্গে রাত কাটাতে হতো। এজন্য খদ্দের থেকে দুই হাজার দুইশ দিরহাম নিতেন সুপারভাইজার আলমগীর। কোনো মেয়ে আপত্তি করলে কোমরের বেল্ট ও লাঠি দিয়ে পেটাতেন আলমগীর।

এদিকে, মূলহোতা আজম খান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও এখনো ব্যবসায় সক্রিয় রয়েছেন তার ভাই নাজিম খান ও এরশাদ খান।

চক্রটির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হচ্ছে জানিয়ে সিআইডির এসআই কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আজমের দুই ভাইকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রেড নোটিশ জারি করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দেশে থাকা তিন ভাইয়ের প্রতিনিধিরা প্রথমে হোটেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে নারীদের প্রলুব্ধ করতেন। বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য বেতন হিসেবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করতেন। এছাড়া দুবাইয়ে যাওয়া-আসা বাবদ সব ধরনের খরচও দিতেন তারা। পরে দুবাই নিয়ে তাদের হোটেলে জিম্মি করে জোর করে দেহ ব্যবসাসহ ড্যান্স ক্লাবে নাচতে বাধ্য করা হতো। এভাবে গত আট বছরে বাংলাদেশের শতাধিক নারীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে চক্রটি।

ফটিকছড়ি থানার ওসি মো. বাবুল আকতার বলেন, আজম খান পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ফটিকছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছয়টি হত্যাসহ মোট ১৫টি মামলা রয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশের তাড়া খেয়ে একপর্যায়ে দুবাইয়ে পাড়ি জমান আজম। সেখানে গিয়ে দেশ থেকে নানা কৌশলে নারীদের নিয়ে শুরু করেন যৌন ব্যবসা। রাতারাতি হয়ে ওঠেন বিত্তশালী।

তিনি আরো বলেন, গত আট বছরে দুবাইয়ে চারটি হোটেল গড়েছেন আজম। বছর পাঁচেক আগে তার একটি হোটলে থেকে লাফিয়ে পড়ে এক নারীর আত্মহত্যার ঘটনায় আমিরাত থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে। এরপর তিনি পাড়ি জমান ওমানে। সেখানেও আগে থেকেই নারী পাচারের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ছিল তার।



১২ জুলাই রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজম খান ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের বিষয়টি জানান সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ২ জুলাই আজমসহ নয়জনকে আসামি করে লালবাগ থানায় মামলা করে সিআইডি।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আজমের ভাই নাজিম খান ও এরশাদ খান, আল আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড, মো. স্বপন হোসেন, নির্মল দাস (এজেন্ট), আলমগীর (দুবাই ক্লাবের সুপারভাইজার), আমান (এজেন্ট) এবং শুভ (এজেন্ট)।



Post Top Ad

Responsive Ads Here