অফিসে নেই চারমাস, তুলে নেন ডিএসসিসি’র অর্ধকোটি টাকা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Friday, June 04, 2021

অফিসে নেই চারমাস, তুলে নেন ডিএসসিসি’র অর্ধকোটি টাকা




 সময় সংবাদ ডেস্কঃ


ব্যক্তিগত ফোন নম্বরসহ সবকিছু সচল থাকলেও চার মাস ধরে করছেন না অফিস। এর মধ্যেই তুলে নিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দোকান ভাড়া ও সালামিসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। 

এমনই অভিযোগ উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব বিভাগের বাজার শাখা-৩-এর রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট কর্মকর্তা ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত ফারুক। ওমর ফারুক রাজস্ব বিভাগের বাজার শাখার কর্মকর্তা বিধায় ডিএসসিসি’র দোকান ভাড়া ও সালামিসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা তুলেছেন। কিন্তু সে টাকা ডিএসসিসির তহবিল জমা দেননি। এ অর্থ তছরুপের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ডিএসসিসি'র পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। পাশাপাশি ওমর ফারুককে অনুপস্থিত থাকার জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার কোনো জবাব পায়নি কর্তৃপক্ষ।


জানা গেছে, অফিস করা অবস্থায় ডিএসসিসির অর্থ আদায়ের জন্য ১০টি রশিদ বই গ্রহণ করেছেন ফারুক। অভিযোগ আছে তার কাছে আরো ৪ শতাধিক মানুষ ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বাবদ টাকা দিয়েছেন। তিনি লাইসেন্স নবায়ন করে দেবেন বলে প্রতিটি লাইসেন্সের বাবদ ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। কিন্তু এই অর্থ এখন পর্যন্ত কর্পোরেশনের তহবিলে জমা দেয়া হয়নি।




এ বিষয়ে গত ২ মে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ডিএসসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল খায়ের। সংস্থাটির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে এখনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।


সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্বে অবহেলা, অর্থ আত্মসাৎ, অসদাচরণ বা অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। কিন্তু ডিএসসিসির এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।


রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর ফারুকের অধীনে ডিএসসিসির বঙ্গবাজার, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স-১, ২ ও ৩ রয়েছে। এসব মার্কেটে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। এরা কর্পোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করার দায়িত্বে ছিলেন ওমর ফারুক।


শাহবাগ থানায় ডায়েরিতে লেখা হয়েছে, বাজার শাখার-৩ রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর ফারুক গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। মোবাইলে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তার বর্তমান ঠিকানায় রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট মোয়াজ্জেম হোসেন, ইফতিখার উদ্দিন, বাজার সুপারভাইজার জাকির হোসেন ও উপ-কর কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খোঁজ করেও তাকে পাননি। তার দায়িত্বাধীন মার্কেটের দোকান ভাড়া আদায়ের জন্য সাতটি ভাড়ার রসিদ বই (নম্বর- ৮৩, ১৬৪, ২০২, ২২৬, ২৪৮, ৬৯৮, ৬৯৯) এবং সালামি আদায়ের জন্য তিনটি রসিদ বই (নম্বর- ১৪২১, ১৪২২ ও ১৪২৩) রয়েছে। এ ১০টি রসিদ বই তার কাছে রক্ষিত আছে।


এতে আরো বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত থাকায় এবং রেকর্ড রুম থেকে গৃহীত বর্ণিত ১০টি রসিদ বই তার কাছে রক্ষিত থাকায় তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক তছরুপের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে অনুমেয়।


এ অবস্থায় তাকে খুঁজে বের করা এবং তার কাছ থেকে রক্ষিত রসিদ বইগুলো উদ্ধারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সাধারণ ডায়েরিতে অনুরোধ করা হয়।


অভিযোগ আছে, বিভিন্ন এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বাবদ চার শতাধিক ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন ফারুখ। তার নেতৃত্বে রাজস্ব বিভাগে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন সময় ব্যাংক কর্মকর্তার নাম, সিল ও স্বাক্ষর জাল করে সংস্থার হোল্ডিং ট্যাক্স, দোকান ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে আদায় করা টাকা সংস্থার তহবিলে জমা না দিয়ে ভুয়া চালান ফরম তৈরি করে আত্মসাৎ করেছেন।


এই ঘটনার সঙ্গে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত থাকারও অভিযোগ আছে। তাই ফারুককে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। আর এ জন্যই ফারুকের বিরুদ্ধে এখনো কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।


ডিএসসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, সিটি কর্পোরেশন আমাকে ডায়েরি করতে বলছে, আমি করছি। তার খোঁজ পাওয়া গেছে কি-না তা থানার কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।


ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় কথা বলতে হলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মাধ্যমে আসতে হবে। 


অভিযোগ আছে ফারুকের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আপনিও জড়িত; এজন্য না-কি তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল হক বলেন, তার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ফারুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 


এদিকে ওমর ফারুক কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি তো সিটি কর্পোরেশন যাই। করোনায় আক্রান্ত থাকায় কিছুদিন যেতে পারিনি। 


সিটি কর্পোরেশনের দোকান ভাড়া ও সালামিসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা তুলে জমা না দেয়া এবং রশিদ বই সম্পর্কে জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, এগুলো আমার কাছে নেই। অফিসে আছে। আর আমি টাকা কালেকশন করিনি। যারা বলছে, মিথ্যা বলছে। ট্রেড লাইসেন্সের নবায়ন করার কিছু টাকা আমার কাছে আছে। অফিস গিয়ে সেসব বুঝিয়ে দেব।

No comments: