কক্সবাজারে পাহাড় ধস: ১২ বছরে ২৭৩ প্রাণহানি - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Friday, July 30, 2021

কক্সবাজারে পাহাড় ধস: ১২ বছরে ২৭৩ প্রাণহানি


 

সময় সংবাদ ডেস্কঃ


ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে বসবাস করছেন কক্সবাজারের ৯ উপজেলার ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন সময়ে পাহাড় ধসে বা বানের পানিতে তলিয়ে এসব মানুষই বেশি প্রাণ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের ২৯ জুলাই পর্যন্ত এ জেলায় নারী-পুরুষ, শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন ২৭৩ জন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ পাহাড় কাটা ও বন উজাড় করার ফলে পাহাড় ধসে প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সদরে ৯৮, টেকনাফে ৪২, চকরিয়ায় ৩৭, মহেশখালীতে ২৯, উখিয়ায় ২৭, রামুতে ২৩ ও ঈদগাঁও উপজেলায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।


কক্সবাজার সদর


গত ১২ বছরে কক্সবাজার সদর উপজেলার পাহাড়তলী, কলাতলী, ঘোনারপাড়া, বৈদ্যঘোনা, টিঅ্যান্ডটি পাহাড়, সার্কিট হাউস, পাতের বাপের ঘোনা, মহাজেরপাড়া, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল ও লারপাড়া ইসলামাবাদ এলাকা এবং সদর উপজেলার পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ হাজীপাড়া, লিংক রোডের দক্ষিণ মহুরিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকবার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহত হয়েছে দুই শতাধিক।


টেকনাফ উপজেলা


এ উপজেলার হোয়াক্ষ্যং, বাহারছড়া, হ্নীলা ও টেকনাফ সদরের নাইটংপাড়া, নয়াপাড়া, কেরুনতলী, রঙিখালী, পানখালী ভিলিজারপাড়া, জাদিমুড়া এবং রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বছর পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে গত ১২ বছরে শতাধিক লোক হতাহত হয়েছেন।


চকরিয়া উপজেলা


চকরিয়ার খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, কাকারা, বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে ৪৫টি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে হতাহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ।


মহেশখালী উপজেলা


মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া, হোয়ানক, শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালীতে ২১ দফা পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ২৯ জন নিহত হলেও আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।


উখিয়া উপজেলা


এ উপজেলার পালংখালী, রাজাপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং, জালিয়াপালং, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও রোহিঙ্গা শিবিরে ২০ বার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ২৭ জনের মৃত্যুসহ আহত হয়েছেন শতাধিক।


রামু উপজেলা


রামুর খুনিয়াপালং, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, কাউয়ারখুপ, উত্তর মিঠাছড়ি, জোয়ারিয়ানালা, ঈদগড়, কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া ও রশিদনগরে অসংখ্যবার পাহাড় ধস হয়েছে। এতে হতাহত হয়েছেন শতাধিক লোক।


ঈদগাঁও উপজেলা


ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাহ সদর ইউনিয়ন, ইসলামাবাদ ও ইসলামপুর ইউনিয়নে প্রতিবছর কোনো না কোনো এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে গত ১২ বছরে অর্ধশতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছেন।


মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান জানান, মহেশখালীতে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি লোক পাহাড়ি বনভূমি দখল করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকছেন।


কক্সবাজার শহরের অবস্থা আরো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, শহরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে লক্ষাধিক লোক পাহাড়ের পাদদেশে এবং চূড়ায় বসতবাড়ি বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে থাকছেন। এতে দেড় লক্ষাধিক মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আশংকার মধ্যে রয়েছে।


রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল জানান, রামুর হিমছড়ি, খুনিয়াপালং, রাজাপালং, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, কাউয়ারখুপ, মনিরজিল, জোয়ারিয়ানালা ও রশিদনগরে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ পাহাড়ি বনভূমি দখল করে থাকছেন।


উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়ায় রোহিঙ্গাসহ ১০ লক্ষাধিক লোক পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন।


উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৫৫ হাজার। এর মধ্যে ২০ হাজার মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন। শুধুমাত্র পালংখালী ইউনিয়নেই পাহাড়ে আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। বেশ ঝুঁকি নিয়ে তারা থাকছেন।


টেকনাফ ও ঈদগাঁও উপজেলার অবস্থা আরো ভয়াবহ বলে জানান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী।


এদিকে, কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি, উখিয়া-টেকনাফ, মহেশখালী, চকরিয়া, ঈদগাঁও ও রামুর ৮০টিরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।


কক্সবাজারের ডিসি মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ভারী বর্ষণ, ভূমিধস ও পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে লোকজনদের সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন নিয়মিত মাইকিং করেছে। এছাড়া লক্ষাধিক লোককে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।


২০১৯ সালের জুন মাসে ভারী বর্ষণে কক্সবাজার পৌরসভা ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মেরিন ড্রাইভ সড়কে হিমছড়িতে পাহাড় ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয় ১০ জনের। সেই হিসাবে গত ১২ বছরে ২৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য সূত্র।


শ্রাবণের অতি বৃষ্টিতে গত চারদিন ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বানের পানিতে তলিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় নারী-শিশুসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয় রোহিঙ্গাও রয়েছেন।

No comments: