আরইউজে সাংবাদিকের উপর হামলা- ১৪ জন হলুদ সাংবাদিকে বিরুদ্ধে মামলা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

সোমবার, নভেম্বর ০১, ২০২১

আরইউজে সাংবাদিকের উপর হামলা- ১৪ জন হলুদ সাংবাদিকে বিরুদ্ধে মামলা




ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ


রাজশাহীতে মূলধারার সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ১৪ জনের নামে মামলা ককরা হয়েছে। রাজশাহী সাংবাদি ইউনিয়নের (আরইউজে) সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় মারপিট, চুরি, ছিন্তাই ও ভাংচুরের অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফারুক আহম্মেদ (৪৫), রেজাউল করিম (৩২) ও লিয়াকতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।



এই মালার অন্য পলাতক আসামিরা হলেন- দড়িখড়বোনা এলাকার রাজন (৩৮), মোহনপুর বিদিরপুরের মাজহারুল ইসলাম চপল (৩৫), কাজলা ধরমপুরের আফসারের ছেলে আল-আমিন হােসেন (২৮), মতিহার থানার অক্টার মােড়ের শাহীনুর রহমান সােনা (৩৬), চারখুটার মোড় এলাকার আবু কাউসার মাখন (৪০), কুমারপাড়ার শামসুল ইসলাম (৩৫), সুমন হােসেন (৩৪), মোন্নাফের মোড়ের সুভাষ (২৫), উপশহরের হারুনুর রশিদ (২৪), টিকাপাড়ার সাগর নােমানী (৩৮), উপজেলা মোহনপুরের শাহীন সাগর (২৮)। এসময় অজ্ঞাতনামা আরাে ১৮/২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।


জানা গেছে- মামলার আসামিরা কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে রাজশাহী দাঁপিয়ে বেড়ালেও এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক, ডিজিটাল অপরাধ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারপিট, জমি দখল, নারী ক্যালেঙ্কারীসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা। এদের কারও বিরুদ্ধ ৫-৭ টি করেও মামলা রয়েছে।


কেউ ফুটপাতের খাবারের দোকানী, কেউ ছিনতাইকারী, কেউ মাদক ব্যবসায়ী। হঠাৎ করেই তারা ‘সাংবাদিক’ বনে গেছেন। নামসর্বস্ব অনলাইন আর নিজেদের ফেসবুকের টাইমলাইনে কিছু লেখা পোস্ট করেই তারা নিজেদের সাংবাদিক দাবি করে বসেন। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা আর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজিই এদের প্রধান কাজ। এদের বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার হয়েছেন রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকরা। তাদের গ্রেপ্তার আর প্রশ্রয়দানকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) প্রত্যাহারের দাবিতে সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করেছেন। 



রোববার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নগরীর অন্যতম প্রধান ব্যস্ততম এলাকা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে রাস্তা অবরোধ করে সাংবাদিকরা অবস্থান নেন। বিকাল পৌনে ৫টায় এই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।


ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব নামের একটি ভুঁইফোড় প্রেসক্লাবের ব্যানারে কয়েকজন কথিত সাংবাদিক মানববন্ধন করতে যান শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে। সম্প্রতি কয়েকজন কথিত সাংবাদিক এই প্রেসক্লাব গঠনের ঘোষণা দেন। এরা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব ও আঞ্চলিক শিক্ষা ভবনের পরিচালক এবং সহকারী পরিচালকের অপসারণের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এসব কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি চাঁদা চাইতে এসেছিলেন। তা না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করা হচ্ছে। মানববন্ধন করা কোন সাংবাদিকদের কাজ নয় জানিয়ে তারা রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকদের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


কারা মানববন্ধন করছেন তা দেখতে ঘটনাস্থলে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন সাংবাদিক। রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকতার নামে এসব কর্মকা- থেকে বিরত থাকার জন্য আয়োজকদের বলেন। আর তখনই পুলিশের সামনেই রফিকুল ইসলামের ওপর চড়াও হন কথিত সাংবাদিকরা। তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে সিনিয়র ফটোসাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর, স্থানীয় সাংবাদিক রাজু আহমেদ এবং কাবিল হোসেনকেও লাঞ্ছিত করা হয়। সাংবাদিক রাজু, কাবিল হোসেন ও আজমকে মারধোর করে ওই হামলাকারীরা। ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা জানান, কথিত সাংবাদিক তাদের ওপর হামলা চালান। এ বিষয়ে তারা মামলা দায়ের করবেন। এদিকে চার সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় কামারুজ্জামান চত্বরে রাস্তায় বসে পড়েন ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। 



সাংবাদিকরা হামলাকারী কথিত সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনের প্রত্যাহারের দাবিতে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। দুপুরের দিকে পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সঙ্গে বসার অনুরোধ জানান।


আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান জনি, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, ডেইলি স্টারের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার আলী হিমুসহ সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পুলিশ কমিশনার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাৎক্ষণিক কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাংবাদিকরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।


এদিকে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের কাছে গেলেও অন্য সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করেই ছিলেন। প্রতিনিধিদল ফিরে আসার পরও ওই আন্দোলন চলছিল। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, হামলাকারী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, হামলাকারী অন্যরাও গ্রেপ্তার হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। 



আর পুলিশ কমিশনার বোয়ালিয়ার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনকে প্রত্যাহার করতে তিন দিন সময় চেয়েছেন। আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে ওসি প্রত্যাহার না হলে বুধবার দুপুর ১২টায় বোয়ালিয়া থানা ঘেরাও করা হবে।

Post Top Ad

Responsive Ads Here