![]() |
পাউবোর নাটের গুরু এসও আবু সায়েম ও এখলাছ ফরাজী : একপরিবারে ১১ পিআইসি! |
হারুন অর রশীদ, দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। হাওর এলাকার এখন এক আলোচিত নাম এখলাছুর রহমান ফরাজী। হাওরের কৃষক ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) সবখানেই ঘুরেফিরেই এখন তাঁর নাম আসছে। এখলাছুর রহমান ফরাজী উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের গিরিশনগর গ্রামের মৃত সামসুজ্জামান ফরাজীর সন্তান। সুরমা ইউনিয়নের ১৯টি পিআইসির বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১১টির পিআইসির সভাপতি-সেক্রেটারী এখলাছ ফরাজী ও তাঁর আত্মীয় স্বজনদের নামে।
পিআইসির তালিকায় দেখা গেছে, সুরমা ইউনিয়নের ১ নম্বর পিআইসির সভাপতি এখলাছুর রহমান ফরাজি। তাঁর ভাতিজা আতাউর রহমান ও ভাগনা মাসুদ ৩ নম্বর পিআইসির সভাপতি ও সেক্রেটারি। তালতো ভাই শহীদুল ইসলাম ৪ নম্বর পিআইসির সাধারণ সম্পাদক। ভাতিজা আব্দুল জলিল ৭ নম্বর পিআইসির সভাপতি। বোন জামাই মোঃ রমজান আলী ২৪ নম্বর পিআইসির সদস্য সচিব। ভাতিজা মোশারফ হোসেন ফরাজী ও ছোট ভাই ইলিয়াস ফরাজী ২৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি ও সদস্য সচিব। ভাতিজা কলিম উদ্দিন ৪০ নম্বর পিআইসির সদস্য সচিব। বোন জামাই রহমত উল্লাহ মানিক ৪১ নম্বর পিআইসির সদস্য সচিব।
শুধু এখলাছুর রহমান ফরাজীর আত্মীয়স্বজনই নয়, ০৬ নম্বর পিআইসিতে অসুস্থ দৃষ্টিহীন জয়নাল আবেদিনকে সভাপতি করা হয়েছে। ৩৯ নম্বর পিআইসির সভাপতি করা হয়েছে মঈনুল ইসলাম নামের একজনকে। অথচ সাথে যে মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছে তা রাজবাড়ী জেলার এক ব্যক্তির নাম্বার। ৪৩ নম্বর পিআইসির সদস্য সচিব করা হয়েছে চাঁন মিয়া নামের একজনকে। অথচ মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছে আরেক মৃত ব্যক্তির।
এদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারির আগেই হাওরের সকল ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বুধবার বার সুরমা ইউনিয়নের কানলার হাওরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সময়সীমা পরিয়ে যাওয়ার পর ১ নাম্বার পিআইসির কাজ শুরু হয়েছে। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে কাদামাটি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁধ। একাধিক বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট, ঘাস লাগানো, ধূর্মুজ করা হয়নি এখনোব্দি।
গত ২৩ মার্চ বুধবার বিকালে সুরমা ইউনিয়নের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের চলমান কাজ ও পিআইসির অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন। এসময় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও কৃষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'হাওরের কৃষকদের নিয়ে পিআইসি গঠনের নিয়ম থাকলেও প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে এখলাছ ফরাজীর পরিবারকেন্দ্রীক পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। এবার ফসলহানী ঘটলে এর দায়ভার পাউবো ও প্রশাসনকেই নিতে হবার। '
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সুরমা ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম বলেন, 'পিআইসি সিন্ডিকেটের নাটের গুরু এখলাছুর রহমান ফরাজী ও পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু সায়েম সাফিউল ইসলাম। এইদুজন মিলে পিআইসির নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার পাঁয়তারা করছে। অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বেড়িবাঁধের কাজও ভালো ভাবে হয়নি। এসব অনিয়ম, দূর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিবাদে আগামী ২৭ মার্চ রবিবার সকাল দশটায় টেংরাটিলা বাজারে কৃষকদের নিয়ে বৃহৎ মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছি।'
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কানলার হাওরের ১ নম্বর পিআইসির সভাপতি এখলাছুর রহমান ফরাজী তাঁর উপর আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'আমার আত্মীয় স্বজন দেখে পিআইসি গঠন করা হয়নি। পিআইসি গঠন করা হয়েছে কৃষক দেখে। তালিকায় যাদের নাম এসেছে সবাই কৃষক। হাওরে সবার জমি আছে। বাঁধের কাজ শেষ। এখন ঘাস লাগানোর কাজ চলছে।'
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েম সাফিউল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'যারা পিআইসি পায়নি তাঁরা বিভিন্ন ভাবে ভুয়া ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়াচ্ছে।'
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, 'আমরা কৃষকদের নিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে হাওরে যাদের জমি আছে তাদেরকে পিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি। কারো আত্মীয়স্বজন দেখে পিআইসি দেওয়া হয়নি। বাঁধের কাজে সময়সীমা ২০ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অনেক জায়গায় স্থানীয়রা মাটি দিচ্ছেনা, আমরা প্রশাসনিক ভাবে হস্তক্ষেপ করে মাটির ব্যবস্থা করছি, যেকারণে সেখানে বাঁধ নির্মাণ করতে বেশি সময় লাগছে।'