শেরপুরে সীমান্তে হাতী তাড়াতে ১০ কি.মি.সোলার ফেন্সিং প্রকল্প | সময় সংবাদ |
আল আমিন জেলা প্রতিনিধি শেরপুর:
বন বিভাগ জানায়, হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী এলাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ২০১৭ সালে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক বেড়া নির্মাণ করে সরকার।গারো পাহাড়ে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে আবারও বৈদ্যুতিক বেড়া (সোলার ফেন্সিং) নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। পাঁচ বছর আগে লোকালয়ে হাতির প্রবেশ ঠেকাতে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বৈদ্যুতিক বেড়া। কিন্তু পরিকল্পনা আর লোকবলের অভাবে এটি কোনো কাজেই আসেনি। তবে আগের ভুল-ক্রটি থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার কার্যকর প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে জানায় বনবিভাগ।
শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত গারো পাহাড়। এ পাহাড়ে আদিকাল থেকেই হাতির বিচরণ রয়েছে। যেসব এলাকা দিয়ে হাতি চলাচল করত ও আগের গভীর বনাঞ্চলে এখন গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি।
জানা গেছে, হাতি তার পূর্ব স্বভাবগত কারণে আগের চেনা রাস্তা খুঁজতে ও খাবার সন্ধানে চলে আসছে এসব লোকালয়ে। আর যখন যখন হাতি লোকালয়ে আসে, তখন শুরু হয় হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব। এতে যেমনি আতঙ্কে থাকে মানুষ, আর তেমনি শঙ্কায় রয়েছে হাতিও।
লোকালয়ে ঢুকে হাতি ক্ষতি করছে মানুষের ফসল, বাড়িঘর ও গাছপালা। জানমাল বাঁচাতে হাতি তাড়াতে গিয়ে প্রতি বছর এটির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ। তবে মারা পড়ছে হাতিও।
একটি হিসাবে দেখা গেছে, গত চার মাসে চারটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত হাতির আক্রমণে ৯০ জন মানুষ মারা গেছে। এ সময়ে হাতির মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকেই বৈদ্যুতিক বেড়া কোনো কাজই করছিল না। এর তারে শক খেয়ে হাতি যাচ্ছিল না। নানা অনিয়মের কারণে এগুলো অকেজো পড়ে রয়েছে। কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের কাজ করে বিল উঠিয়ে সটকে পড়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে প্রকল্পের কয়েকটি খুঁটি আর ছেঁড়া জিআই তার ছাড়া আর কিছু নেই। ব্যাটারিগুলোর একটিরও কোনো হদিস নেই। ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে করা এ বৈদ্যুতিক বেড়া ব্যবস্থা ভেস্তে গেছে।
ছোট গজনীর ডিবিসন সাংমা বলেন, ফেন্সিং শুধু পাহাড়িদের জন্য করা হয়েছিল, যা আমাদের কোনো কাজে আসেনি। এসব উদ্যোগ শুধু লোক দেখানো। সরকারের টাকা আত্মসাত করার ফন্দি মাত্র।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, উদ্দেশ্য ছিল, বৈদ্যুতিক বেড়ার তারে শক খেয়ে হাতি চলে যাবে। এতে রক্ষা পাবে মানুষ, ফসল, বাড়ি-ঘর, এমনকি হাতিও। কিন্তু লোকবলের ও তদারকির অভাবে পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে। এখন নতুন করে বৈদ্যুতিক বেড়া দিলে পর্যাপ্ত লোকবল ও তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে।
বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সম্প্রতি নালিতাবাড়ীতে বনবিভাগের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, আবারও কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ কিলোমিটার সোলার ফেন্সিং করার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। আগের প্রকল্পটি পাইলট প্রকল্প ছিল। সেখানে যে যে সমস্যা ছিল তা দূর করে নতুন করে কার্যকর সোলার ফেন্সিং লাইন করা হবে। আগের লাইনগুলোও ঠিক করা হবে।