![]() |
"ফরিদপুরে গুমের মামলার ৩৫ দিন পর জীবিত উদ্ধার | সময় সংবাদ " |
ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের সালথা থেকে এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে তার স্ত্রীর মামলার এক মাসের বেশি সময় পর জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার গভীর রাতে বগুড়া সদর থেকে নুর ইসলাম চৌধুরী নামের ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয় বলে সালথা থানার ওসি মো. শেখ সাদিক জানিয়েছেন।
গত ১৪ জুলাই সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রাম থেকে নুর ইসলাম চৌধুরীকে অপহরণের পর গুম করা হয় বলে তার স্ত্রীর অভিযোগ।
এ অভিযোগে ২৭ জুলাই স্থানীয় ১৪ জনের নামে ফরিদপুর আদালতে একটি মামলা করেন তার স্ত্রী আন্না বেগম। আদালত মামলাটি সালথা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। থানা থেকে মামলাটি তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই ফরহাদ হোসেনকে।
মামলার আসামিরা হলেন স্থানীয় রাঙ্গারদিয়া গ্রামের মান্নান মাতুব্বর, সিদ্দিক মাতুব্বর, সানোয়ার মাতুব্বর, মুনছুর মুন্সী, হাবিব শেখ, আনিছ শেখ, হাসান শেখ, বাবলু মোল্যা, রাকিব শেখ, দবির শেখ, কবির শেখ, ইসমাইল মোল্যা, হিলাল শেখ ও হিমায়েত শেখ।
বাদী আন্না বেগম মামলায় অভিযোগ করেন, আসামিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা ও গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে বিরোধ চলছিল। কিছুদিন আগে গাছ কাটা নিয়ে মামলার এক আসামি আনিচের সঙ্গে তার স্বামীর বিরোধ হয়।
“গত ১৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে আমার স্বামী স্থানীয় স্লুইচ গেট বাজারে চা খেতে যায়। রাত ১১টা বেজে গেলেও সে বাড়ি ফিরেনি। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।”
মামলায় আরও বলা হয়, ওই সময় মামলার এক আসামি ছিদ্দিক তাদের বাড়ি গিয়ে বাদীর শ্বশুরকে বলেন- ‘তোমার ছেলের লাশ রাঙ্গারদিয়া কুমার নদে ভাসছে, যাও গিয়ে লাশ নিয়ে আস।’
পরে আমলা নদীর পাড়ে গিয়ে খোঁজখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে তারা বাড়ি ফির যান বলে মামলায় উল্লেখ করেন।
বাদী অভিযোগ করেন, “পরদিন সকাল ৯টার দিকে আমার ছেলে তার ফেইসবুক আইডিতে ঢুকে একটি ভিডিও পোস্ট দেখে। সেখানে দেখা যায়, আসামিরা আমার স্বামীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করছে। তারপর থেকে তার আর খোঁজ নেই। এতে আমরা সন্দেহ ও আশঙ্কা করছি যে আমার স্বামীকে অপহরণের পর খুন করে তার লাশ গুম করেছেন আসামিরা।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সালথা থানার এসআই ফরহাদ হোসেন বলেন, মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত শুরু করার পর অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেও বেশ কিছু গুরুপূর্ণ তথ্য মেলে। এসব তথ্যের সূত্র ধরেই নুর ইসলামকে উদ্ধার করা হয়।
“মূলত তদন্ত করে আমি যেটা পেয়েছি তা হলো মামলার আসামিদের একজনের স্ত্রীর সঙ্গে নুর ইসলামের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ঘটনার রাতে ওই আসামির স্ত্রীর সঙ্গে ধরা পড়ার পর মারধরের শিকার হন নুর ইসলাম।”
এসআই ফরহাদ বলেন, মারধর খাওয়ার পর পরিবারের পরামর্শে নুর ইসলামকে ওই রাতেই বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন নুর ইসলাম বগুড়া গিয়ে তার শ্যালক ওমর ফারুকের কাছে থাকেন। সেখানে তিনি আফরিন জুট মিলে চাকরি নেয়। এদিকে তার স্ত্রী আন্না বেগম মামলা দায়ের করেন।
“বিষয়টি তদন্ত করে ক্লিয়ার হওয়ার পর আমি সঙ্গীয় পুলিশ দিয়ে বগুড়া সদরে গিয়ে প্রথমে তার শ্যালককে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নুর ইসলাম ধরে করে নিয়ে আসি।”
সালথা থানার ওসি মো. শেখ সাদিক বলেন, নুর ইসলামকে লুকিয়ে রেখে তার স্ত্রী আদালতে মিথ্যা অভিযোগে সাজানো মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার আসামিরা জানান, মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রায় এক মাস ধরে তাদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছিলেন নুর ইসলামের স্ত্রী। মিথ্যা মামলার দেওয়ায় তারা নুর ইসলামের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান।