আম ব্যবসায় সাফল্য: বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোহাগের
মো: নাজমুল হোসেন ইমন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের আবিদ রাইয়ান সোহাগ বর্তমানে অনলাইন ব্যবসায় সফলতার এক নতুন উদাহরণ।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইউ) ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রিনিউরশিপ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগ করোনা ভাইরাসের কারণে যখন ঘরে বসে পড়াশোনায় সময় কাটাচ্ছিলেন, তখনই শখ ও উদ্যম নিয়ে তিনি অনলাইন আম ব্যবসা শুরু করেন। ফেসবুকে তিনি খোলেন ‘গ্রামীণগ্রো’ নামে পেজ ও গ্রুপ, এবং আজ তার ব্যবসা দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে গেছে।
সোহাগের ব্যবসা সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। গ্রাহকরা ফেসবুকের মাধ্যমে অর্ডার দেন এবং সোহাগ নিজে ডেলিভারি নিশ্চিত করেন। ব্যবসার প্রধান বাজার হলো সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ঢাকা। এর বাইরে দেশজুড়ে ৩৫টি জেলায় আম সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেন, তার পণ্য সম্পূর্ণ ফ্রেশ ও কার্বাইডমুক্ত।
“আমাদের প্রকল্পে ১৫টির বেশি আম রয়েছে, যেমন, লক্ষণভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া। এছাড়াও আশ্বিনা, বারি-৪, কাটিমন, গৌরমতি, ফজলি আমও উপলব্ধ,” জানান সোহাগ। প্যাকেটের ওজন অনুযায়ী ১০, ১২, ২০, ২৪ কেজি পর্যন্ত ডেলিভারি করা হয়।
সোহাগ বলেন, “আমার বাবা-মার কিছু আম বাগান আছে। পাশাপাশি আমার মামা তার চারটি আম বাগান বিক্রি করবেন। আমি ঝুঁকি নিয়ে বাগান কিনি এবং ব্যবসা শুরু করি।” তিনি নিজের চোখে বাগান পর্যবেক্ষণ করেন, প্রতিদিন দুইবার মনিটরিং করেন যাতে আমের মান বজায় থাকে।
প্রথম বছরে প্রতিটি চালান ছিল ৩০০–৪০০ কেজি। এবার ১-২ টন পর্যন্ত ডেলিভারি হয়েছে। “আমার কোনো গুদাম নেই, সব কিছু বাগান থেকে সরাসরি প্যাক করে পাঠানো হয়,” যোগ করেন সোহাগ।
ব্যবসায় আসার সময় সোহাগের পরিবার, বন্ধু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা সহযোগিতা করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তার বোন জামাই, যিনি সবসময় পাশে ছিলেন। এছাড়াও অনলাইনে প্রচারণা চালাতে বন্ধুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
যুবক উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে সোহাগ অনেক ট্রল ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। তবে তিনি এগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখেন। তার লক্ষ্য শুধু নিজেই সফল হওয়া নয়, বরং অন্যকে স্বাবলম্বী করতে সাহায্য করা।
সোহাগের স্বপ্ন বড় উদ্যোক্তা হওয়া। তিনি ইতিমধ্যে লিচু, আখ, খেজুর গুড়, কুমড়ো বড়ি, মধু, ঘি ও ড্রাই ফুড বিক্রিতে ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছেন। ভবিষ্যতে মৎস্য চাষ, গবাদি পশু পালনসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।
তাঁর মূলমন্ত্র: সততা, পরিশ্রম এবং রিস্ক নেওয়ার সাহস। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন, “সৎ, বিনয়ী ও পরিশ্রমী হলে ব্যবসায় সফলতা আসবেই।”