ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সালথার বাউশখালী জমিদার বাড়ি - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সালথার বাউশখালী জমিদার বাড়ি

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সালথার বাউশখালী জমিদার বাড়ি
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সালথার বাউশখালী জমিদার বাড়ি


শরিফুল হাসান,সালথা(ফরিদপুর)প্রতিনিধি:

ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলার অন্তর্গত বল্লভদি ইউনিয়নের বাউশখালী গ্রামে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দুই শত বছরের পুরনো বাউশখালী জমিদার বাড়ি। সালথা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি এক সময় ছিল জমজমাট জনবসতি, আর এখন নিস্তব্ধ এক স্মৃতিস্তম্ভ।


ঐতিহাসিক পটভূমি ১৭৬০ সাল থেকে এই জমিদার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন সিংহ পরিবার। যদিও শুরুর দিকের জমিদারদের নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না, তবে ১৮৫৯ সালে জন্ম নেওয়া যতীন্দ্ৰনাথ সিংহ রায় বাহাদুর ছিলেন এই পরিবারের অন্যতম উজ্জ্বল নাম। তিনি বঙ্গীয় সিভিল সার্ভিসে দীর্ঘ ৩০ বছর দায়িত্ব পালনের পর সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ফরিদপুরের একাংশে তিনি জমিদারিত্ব করতেন। তাঁর স্ত্রী সরোজিনী সিংহ ও তিনি আমৃত্যু বাউশখালী জমিদার বাড়িতে বসবাস করতেন। তাদের মৃত্যুর পর কোথায় সমাধিস্থ করা হয়েছে তা আজও অনির্দিষ্ট।


পরবর্তী প্রজন্মের অবদান যতীন্দ্রনাথ সিংহের একমাত্র পুত্র সুরেন্দ্রনাথ সিংহ কলকাতায় বসবাস শুরু করলেও, তাঁর পুত্র সত্যজিৎ সিংহ (বৈদ্যনাথ বাবু) ১৯৫২ সালে স্ত্রী রেখা রাণী সিংহকে নিয়ে ফিরে আসেন বাংলাদেশে এবং বাউশখালী জমিদার বাড়িতে পুনরায় বসবাস শুরু করেন।


সত্যজিৎ সিংহ ছিলেন সমাজসেবক। হাট-বাজার, শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে জমি দান করে এলাকায় অবদান রাখেন। তিনি ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর এবং তাঁর স্ত্রী রেখা রাণী সিংহ ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁরা উভয়েই সমাহিত হন সিংহবাড়ি সংলগ্ন দুর্গা মন্দিরের পাশে।


সিংহবংশের কেউ বর্তমানে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে নেই। রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন, ঠাকুর দালান ও জমিদার বাড়ির দেখাশোনা এবং সংরক্ষণের জন্য রেখা রাণী সিংহ তাঁদের সম্পত্তি রাধাগোবিন্দের নামে দান করেন।


ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সালথার বাউশখালী জমিদার বাড়ি
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সালথার বাউশখালী জমিদার বাড়ি



বর্তমান অবস্থা জমিদার বাড়ির প্রাসাদতুল্য নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে চুন-সুরকি, ইট, কাঠ ও লোহার সমন্বয়। রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন মন্দির এবং তিনতলা বিশিষ্ট দুটি প্রাচীন ভবন। এক সময় যে বাড়িতে ছিল সোনা-রুপার অলংকার, পাথরের মূর্তি, তামা-কাসার আসবাব এখন সেখানে শুধুই নীরবতা আর ভাঙনের শব্দ।


স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহীন জানান, বাউশখালী জমিদার বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত এবং শুধুই একটি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে টিকে আছে। তাঁর মতে, এটি দ্রুত সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত।


সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাউশখালী জমিদার বাড়ি কেবল একটি পারিবারিক স্থাপনা নয়, এটি এক যুগের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অনন্য দলিল। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ না করলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারি উদ্যোগ, গবেষকদের আগ্রহ, এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা এই নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত জরুরি।


Post Top Ad

Responsive Ads Here