![]() |
| চট্টগ্রামে ১১৭ কারখানা বন্ধ, বেকার ৫১ হাজার শ্রমিক |
মো. নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত এক বছরে চট্টগ্রামে পোশাক, ইস্পাতসহ বিভিন্ন খাতের ১১৭টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৫০টি স্থায়ীভাবে এবং ৬৭টি অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে।
শিল্প পুলিশের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এসব বন্ধ কারখানায় কর্মরত প্রায় ৫১ হাজার শ্রমিক এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।
শিল্প পুলিশের তালিকায় বলা হয়েছে—
স্থায়ীভাবে বন্ধ ৫০টি কারখানায় শ্রমিক ছিলেন ৮,৭৪৩ জন
অস্থায়ীভাবে বন্ধ ৬৭টি কারখানায় শ্রমিক ছিলেন ৪৩ হাজারের বেশি
এছাড়া, গত এক বছরে চট্টগ্রামের ৭০টি কারখানায় ৩১৫ বার শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ১৪ ও ১৫ অক্টোবর প্যাসিফিক গ্রুপের কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে সেগুলো পুনরায় সচল হয়।
শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া মেটিয়ে দিয়েছে। আর্থিক সংকট, ঋণের চাপ, এলসি জটিলতা ও অর্ডারের অভাবে অনেক কারখানা কার্যক্রম বন্ধ করেছে।”
গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। শুধু চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই বন্ধ হয়েছে ১১টি।শিল্প পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব কারখানা অর্ডার না থাকা ও মালিকদের আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়েছে।
বিজিএমইএ পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, “বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে গেছে। মার্কিন ট্যারিফ বাড়ায় অর্ডার ও দাম কমেছে। ব্যাংকে এলসি খোলা জটিল হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনেও অনেক মালিক ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।”
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) নাসা গ্রুপের টয় উড (বিডি) লিমিটেড, এমএনসি অ্যাপারেলস লিমিটেড, থিয়ানিস অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেড—এই চারটি কারখানা বন্ধ রয়েছে।এই চার কারখানায় ৪,৮১৮ জন শ্রমিক কাজ করতেন।শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, এসব কারখানা এলসি জটিলতা, ব্যাংক সংকট ও আর্থিক দুরবস্থার কারণে কার্যক্রম বন্ধ করেছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের তিনটি কারখানা—আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড, আরামিট ফুটওয়্যার এবং আরামিট পাওয়ার লিমিটেড—চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে বন্ধ হয়েছে।
বন্ধের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আর্থিক অসচ্ছলতা ও কাঁচামালের ঘাটতি।
গত এক বছরে ১৩টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, স্টিল মিল ও প্যাকেজিং কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে।বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, “হংকং কনভেনশন অনুযায়ী ২৬ জুনের মধ্যে সব ইয়ার্ডকে গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তরের নির্দেশ ছিল। কিন্তু মাত্র ১৭টি ইয়ার্ড তা সম্পন্ন করতে পেরেছে। ফলে অনেক ইয়ার্ড কাজ বন্ধ রেখেছে।”
তিনি আরও জানান,“জাহাজ আমদানি কমেছে, ব্যাংকগুলো এলসি দিতে পারছে না, ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না—তাই অনেকে কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন।”

