চাঁদাবাজির ‘মহামারি’তে দেশ: আতঙ্কে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫

চাঁদাবাজির ‘মহামারি’তে দেশ: আতঙ্কে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ

 

চাঁদাবাজির ‘মহামারি’তে দেশ: আতঙ্কে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ
চাঁদাবাজির ‘মহামারিতে দেশ: আতঙ্কে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ


মো. নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:

দেশজুড়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে চাঁদাবাজি। রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এই অপরাধ। প্রাণনাশের হুমকি, গুলি, হত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চাঁদাবাজি যেন নীরব এক মহামারিতে রূপ নিয়েছে।


সম্প্রতি রাজধানীর পল্লবীতে এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে দাবি অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় ওই ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে তিনি পঙ্গুত্ব বরণ করেন এবং পরিবারসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।


এ ধরনের ঘটনা শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই ঘটছে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক এক পরিচালক জানান, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তাঁর কাছেও মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের এক স্বনামধন্য নারী উদ্যোক্তা জানান, নগরের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত বড় সাজ্জাদ তাঁর কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা না পেয়ে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।


সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর কারওয়ানবাজার, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, উত্তরা, মতিঝিল ও পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। হকার্স মালিক সমিতির এক নেতা জানান, হুমকি দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজরা।


শুধু ব্যবসা নয়, বাড়িঘর নির্মাণ, পরিবহন, বাজার ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক সংগঠন—সবখানেই চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য। অনেক ক্ষেত্রে চাঁদাবাজদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। কেউ পুরোনো রাজনৈতিক দলের নেতা, আবার কেউ নতুন রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে দেদার চাঁদাবাজিতে জড়াচ্ছে।


পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে আড়াই হাজারের বেশি চিহ্নিত চাঁদাবাজ রয়েছে। সারা দেশে প্রতিটি জেলায় এক হাজারের বেশি চাঁদাবাজের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে অর্ধলক্ষাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ যাচাই করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।


ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “চাঁদাবাজি একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। এর কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।”


পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, গত ১০ মাসে চাঁদাবাজির অভিযোগে এক হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু ডিএমপিতেই ছয় মাসে ৪১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘নতুন চাঁদাবাজ’।


অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সৃষ্ট শূন্যতার সুযোগ নিয়েই চাঁদাবাজির বিস্তার ঘটেছে। রাজনৈতিক পরিচয়, স্থানীয় দাপট ও গ্যাং সংস্কৃতির মিশ্রণে এই অপরাধ আরও ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে।


চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত সহিংসতায় গত ১৪ মাসে সারা দেশে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতাও বেড়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে চাঁদাবাজির দ্বন্দ্বই বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।


র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এ জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, “চাঁদাবাজসহ সব ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব সারা দেশে তৎপর রয়েছে।”


সব মিলিয়ে চাঁদাবাজি এখন দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই ‘মহামারি’ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে—এমন আশঙ্কাই করছেন সচেতন মহল।

Post Top Ad

Responsive Ads Here