নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশে আজ গণতন্ত প্রতিষ্ঠিত: চুয়েটের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Friday, December 06, 2019

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশে আজ গণতন্ত প্রতিষ্ঠিত: চুয়েটের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি


নেজাম উদ্দিন রানা,রাউজান :
রাষ্ট্রপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার চট্টগ্রামের এই পাহাড়শোভিত মনোরম পরিবেশে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। সমাবর্তনের এই ঐতিহাসিক ক্ষণে আমি সনদপ্রাপ্ত œাতকদের অভিবাদন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এ শুভদিনে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে যারা আজকের সমাবর্তনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলার জন্য নিরলস ও আন্তরিক পরিশ্রম করেছেন। বক্তব্যের শুরুতেই আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়ে বাঙালি জাতিকে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন আপন সত্ত্বায়। স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ভাষা আন্দোলন ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের। আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৬৬ সালে এই চট্টগ্রামের লালদিঘীর মাঠে লক্ষ জনতার সামনে ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালির মুক্তির সনদ হচ্ছে এই ৬-দফা। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উৎরাই এর মধ্য দিয়ে জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান জননেতা এম এ হান্নান ঐ-দিন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ ঘটনা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে আমাদের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হয়। বন্ধ হয় মানুষের বাক, মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতা। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছেন। এ রূপকল্প বাস্তবায়নে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এরই মধ্যে আমরা স্বল্প মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার মধ্য দিয়ে উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছি। আজকের শিক্ষিত তরুণরাই এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। এদেশের রয়েছে বিপুল মানব সম্পদ, উর্বর কৃষিভূমি এবং সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ। জনবহুল এ দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার। প্রকৌশলীগণ উন্নয়নের কারিগর। তাদের মেধা, মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা ও চেতনায় থাকবে দূরদৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন। আগামী ২০৫০ সালে বা ২১০০ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হওয়া উচিত বা বাংলাদেশের অবস্থান কোন্ স্তরে পৌঁছাবে তা বিবেচনায় রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেও যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা আজ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের আত্ম-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। আমি আশা করি, আজকের নবীন প্রকৌশলীরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করবে এবং তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও লব্ধ জ্ঞানকে এ লক্ষ্যে কাজে লাগাবে।

নবীন গ্রাজুয়েটবৃন্দের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাইলফলক; একইসাথে তা ¯œাতকদের জন্যও একটি স্মরণীয় দিন। জীবন চলার পথে তোমরা আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ সোপান অতিক্রম করলে। জীবনের আসল সংগ্রাম এখন থেকে শুরু হবে। আজকের এ সনদ প্রাপ্তি সেই সংগ্রামে অবতীর্ণ হবার স্বীকৃতি পত্র। এ সনদের সম্মান তোমাদের রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, তোমাদের এ অর্জনে দেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। তোমরা তোমাদের সেবা, সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম দিয়ে এ সনদের মান সমুজ্জ্বল রাখবে। কর্মক্ষেত্রে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক না কেন; মাতৃভূমি এবং এ দেশের জনগণের কথা কখনো ভুলবে না। অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথা নত করবে না। তোমাদেরকে এ পর্যায়ে আসতে দেশবাসী যে সহায়তা করেছে তোমরা তোমাদের মেধা, মনন ও কর্মের মাধ্যমে তা পরিশোধ করবে। আমি তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। তোমরা বড় হও এবং দেশ ও  জাতির কল্যাণে অবদান রাখ।

সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ.কে. আজাদ চৌধুরী বলেন,

তথ্য প্রযুক্তি ৩য় শিল্প বিপ্লবের দান হলেও আজো তার প্রয়োজন, বিস্তৃতি এবং চেলেঞ্জ সমুহ রয়ে গেছে। সমগ্র বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তৃতি দূরকে করেছে নিকট। আধুনিক উন্নয়নের হাওয়া তাই অতি স্বল্প সময়েই ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশও আজ আর পিছিয়ে নেই। গত এক দশকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি গ্রামের দরিদ্র কৃষকের জীবন থেকে শহরের উচ্চ বিত্তসহ  সবার জীবনকে প্রভাবিত করছে। কৃষি, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, ব্যবসা-বানিজ্য সহজতর করার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের তরূণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষালাভ ও তার ব্যবাহারিক প্রয়োগে প্রবল আগ্রহ ও উদ্দীপনা পরিলিক্ষিত হচ্ছে যার দরূণ আজ দ্রুততার সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। আমার বিশ্বাস এই প্রতিষ্ঠানের ¯œাতকরা তাদের জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করে আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার  চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী। গত চার বছরের সর্বোচ্চ সিজিপিএধারী ৪ জনকে “বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক” প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন- ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ই.এম.কে. ইকবাল আহমেদ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়া আবসার, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্চয় বড়–য়া এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ রাশেদুর রহমান। এছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২ হাজার ১৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট এবং ৮৩ জন পোস্ট-গ্র্যাজুয়েটসহ মোট প্রায় ২ হাজার ২৩১ জন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সমাবর্তন ডিগ্রী প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীসহ বিশিষ্ট জন উপস্থিত ছিলেন।

No comments: