এ,কে এম গিয়াসউদ্দিন ,ভোলা-
দোয়েল, ফিঙে, ময়না টিয়ে এ রকম কিছু পাখি অতি পরিচিত। ছোটবেলা পাঠ্য পুস্তকের পাতা উল্টাতে তাদের সাথে পরিচয় ঘটে যায়।তেমনই বক একটি পরিচিত পাখি।বাংলা সাহিত্যে নান্দনিক এই পাখিটি গুরুত্ব পেয়েছে।বিশেষ করে জীবনানন্দ দাসের কবিতায় আমরা খুজে পাই বাংলার ধবল বককে।তবে শহরের আকাশের চেয়ে গ্রামে সচরাচর এই পাখির দেখা মিলে।খোলা হাওর জলাশয় কিংবা ঘন বাঁশবনে অনেকটা নিঃশব্দে এই পাখি দল বেঁধে বসে থাকে সময় কাটায়।সন্ধায় নীড়ে ফিরে সময় হলে একইভাবে আকাশে দলবেঁধে যেতে দেখা যায়।
মাঘের শেষে ভোলা সড়কের দুই পাশে বড় হাওড়, কৃষি জমি কিংবা জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলতো এ পাখির।দুর আকাশ থেকে ক্লান্তি নিয়ে দল বেঁধে যখন সবুজ ধানের ক্ষেতে এসে বসতো তখন অপুর্ব এক শুভ্রতা ছড়াতো প্রকৃতিতে। বক দেখা মেলতো সবখানেই, সেই বক আজ কমে আসছে।
বক লম্বা পা বিশিষ্ট মিঠা পানির জলাশয় ও উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী জলচর প্রাখি।পৃথিবীতে ৬৫ প্রজাতির বক রয়েছে।এদের মধ্যে ১৮ প্রজাতির বক বাংলাদেশে পাওয়া যায়।যার মধ্যে ৫টি বগা(ছোট বগা,মাঝলা বগা,প্রশান্ত শৈল বগা,বড় বগা ও গো বগা)। ৯ টি বক(ধুপনি বক,দৈত্য বক,ধলপেট বক,লালচে বক,চীনাকানি বক,ক্ষুদে নিশি বক) এবং ৪টি বগলা (খয়রা বগলা,হলদে বগলা,কালা বগলা,বাঘা বগলা) সারা পৃথিবীতে এদের বিচরন থাকলেও নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে এদের বেশি পাওয়া যায়।
বক সাধারনত মাছ, ঝিনুক,কাঁকড়া, জলজ পোকা ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে।খাল বিল পুকুর, হ্রদ,ঝিল, হাওড়,বাওড়,নদী, সমুদ্রের উপকুলে এদের বসবাস। এছাড়া বাঁশঝাড়, ঝোপঝাড়ে দলবদ্ধ ভাবে বাস করতে দেখা গেছে।
বর্ষার শুরুতে এরা একবারেই প্রজনন করে।একসাথে ২ থেকে ৫টি ডিম দেয়।অবশ্য বগলা ডিমের সংখ্যা আরো বেশি।ডিম দেওয়ার সপ্তাহের ভেতর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়,সপ্তাহের ভেতর এরা উড়তে শেখে।
কিন্তু বর্তমানে আমাদের অতিপরিচিত নান্দনিক এই বক বিপন্নের পথে।
মানুষ মাছখেকো পাখি বেশি খায় বলে দিন দিন বকের সংখ্যা আশন্কাজনক ভাবে কমে যাচ্ছে।ফাঁদ পেতে অবৈধভাবে বক শিকার জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, নদী নালা খাল বিল ভরাট করে শহরায়ন,বৃক্ষ নিধন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে বকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ভোলা চরনোয়াবাদের জুয়েল, পরানগঞ্জের জামাল উদ্দিন বাহার, পৌর আলগীর সোহেল,মাকসুদ কালিবাড়ীর আরিফ,শাহীন জানান একসময়ে সাদা বক, ছোট বগা,মাঝলা বগা,ধলপেট বক,দৈত্য বক ও নাম না জানা বকের বিকেল বেলায় নিড়ে ফিরে উচু গাছে উড়তে বসা ছিলো চোখে দেখার মতো। সামান্য বাতাসে বাচ্চারা তলায় পড়ে থাকতে দেখা যেতো। অথচ দেখা মিলছে না বকের।
চরফ্যাশন দুলার হাট থানার বাসিন্দা সফিক,আঃ জলিল,জহির উদ্দিন মাষ্টার, সগির আহম্মেদ মাষ্টার জানান একসময়ে আমাদের বাড়ী ও সাবেক চেয়ারম্যান বাড়িতে প্রচুর বকের দেখা মিললে ও এখন তেমনটা নেই বললে চলে।
প্রকৃতি প্রেমীরা হারিয়ে যেতে বসছে এ পাখিটি স্বীকার করে জানান বন্যপ্রানী সংরক্ষন আইন থাকা ১৯৭৪ এর ২৬ ধারা মতে অবৈধভাবে ভাবে পাখি শিকারের জন্য ২ বছর সাজার আইন থাকা সত্বেও ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন,লালমোহন,চরফ্যাশন উপজেলা বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে বক নিধন করা হচ্ছে।
বক ধরার জন্য সবুজ ঘাস প্যারাবন,জলাশয়,ধানক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে ফাঁদ পেতে রাখা হয়।এছাড়া ও কিছু পোষা বকের দ্বারা বকগুলোকে ফাঁদে ফেলা হয়।স্থানীয় বাজারে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
এ ধরনের ঘটনাই নয়, সকলের অজানায় প্রতিদিন ঘটে চলছে তাদের নির্মম হত্যা কান্ড।
বন্যপ্রাণী শিকার ও বিক্রয় আইনত দন্ডণীয় অপরাধ। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় বর্তমানে নির্বিচারে পাখি শিকার ও অবাধ বিক্রয় নিয়মে পরিনত হয়ে যাচ্ছে।
এ জন্য চাই আইন যথাযথ প্রয়োগ।সর্বসাধারনের মধ্যে প্রচার প্রচারনা সাথে সাথে বকের জন্য অনুকুল আবাসস্থল।
উল্লেখ্য প্রকৃতির সম্পদ এই পাখিদের বাঁচিয়ে রাখলে আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় পেতে প্রকৃতপ্রেমী, সমাজ পতি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।