![]() |
বোয়ালমারীতে মাটি চোরদের হামলায় ইটভাটা ম্যানেজার মারাত্মক আহত |
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
"রক্ষক যখন ভক্ষক জুটে, রাজার গোলা সিঁকেয় উঠে!" এমন প্রবাদের প্রমাণ মিললো ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে অবস্থিত আল আলী আটোব্রিক ভাটায়।
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আল আলী অটোব্রিকস ভাটায় দীর্ঘদিন ধরে চলা মাটি চুরির ঘটনায় ম্যানেজারসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় মারাত্মক আহত অবস্থায় ম্যানেজার সবুজ হোসেন মিয়াকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত ওই ইটভাটায়।
ভাটা সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর ধরে ভাটার পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী ও সুপারভাইজার মিলে প্রতারণার মাধ্যমে মাটি চুরি করে আসছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি গাড়ির মাটি পরিমাপ করে রসিদ প্রদান করা হয়। অথচ অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাস্তবে ১০০ ট্রাক মাটি ঢুকলেও ১২০–১৩০ ট্রাকের ভুয়া রসিদ তৈরি করে অতিরিক্ত বিল তুলে নেওয়া হতো।
এভাবে প্রতিদিন প্রায় ২০–৩০ ট্রাক মাটি চুরি করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করতো চক্রটি। মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন শেখর গ্রামের শাহাবুদ্দিন ঠাকুর। তার সঙ্গে সুপারভাইজার কামাল হোসেন মৃধা, নিরাপত্তারক্ষী সুজন মোল্যা, মিল্লাতুল ইসলাম এবং দাউদ মিয়া এই চক্রে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভাটা কর্তৃপক্ষ মাটির হিসাবের গরমিল বুঝতে পেরে গোপনে তদন্ত চালায়। এক পর্যায়ে এক মাটি ব্যবসায়ীর জবানবন্দিতে চুরির বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মীর মধ্যে দুইজন প্রাথমিকভাবে দোষ স্বীকার করেন। বাকি তিনজন প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে মারধরের মুখে তারা স্বীকার করে যে, কোরআন ছুঁয়ে শপথ করায় তারা মুখ খুলতে চাননি।
ভাটা কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরিচ্যুত করলে, অভিযুক্তরা বহিরাগতদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভাটায় হামলা চালায়। এতে ম্যানেজার সবুজ হোসেনসহ আরও দুই কর্মচারী গুরুতর আহত হন।
সবুজ হোসেনের হাতে ২২টি সেলাই এবং পিঠে তিনটি গভীর কোপ রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। তার হাতে একটি রগ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাসপাতেলে চিকিৎসাধীন ম্যানেজার সবুজ হোসেন জানান, “চক্রটি প্রথমে আমাদের নতুন নিয়োগ পাওয়া নিরাপত্তারক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিতো। আমরা হিসাব বুঝতে পেরে এক ব্যবসায়ীকে চাপে ফেললে সে সত্য স্বীকার করে। এরপরই তাদের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু চাকরি হারিয়ে তারা হামলা চালায়। তারা আমাকে হত্যা করতে এসেছিলো।”
চোরচক্রকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, “গ্রামে চোর ধরা পড়লে সাধারণত গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। ওই সময় কর্মচারীরা উত্তেজিত হয়ে মারধর করেছে।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে চিকিৎসাধীন থাকায় মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ভাটা কর্তৃপক্ষ নেবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।