সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর থেকে :
চারিপাশে ভয়াবহ এক অভব্য মরন ঘাতক নিঃশ্বাস নিচ্ছে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস। সারা বিশ্ব অদৃশ্য ভাইরাসটির পদতলে পিষ্ট হয়ে অনেক রাষ্ট্র খেই হারিয়ে উপরের দিকে চেয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি। সেটি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনো নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। এ থেকে যেন কোন সমাধানের পথ বা রাস্তা কেউ বাতলে দিতে পারছে না। অজানা এক ভবিষৎ অন্ধকার রাস্তায় হাটছি ঘর বন্দি থাকা অবস্থায়। অন্যদিকে সারা বিশ্বের মত চাপের মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। এমন অবস্থায় কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে, মানুষের জীবন না অর্থনীতি? এই সিদ্ধান্ত নিয়ে টালমাটাল প্রতিটি রাষ্টের কর্নধাররা।
এরই মাঝে বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৩, আক্রান্ত ৪৮ লাখ ১ হাজার ৫৩২ জন, চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে ১৮ লাখ ৫৮ হাজার ১০৮ জন। দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৩২৮ জন।
করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত ফরিদপুরে ৬০ জন করোনা রোগি শনাক্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও সামনের দিনে এই ভাইরাস কতটা বিধ্বংসী হতে পারে সেই ভয়ে ভীত রয়েছে জেলার বাসিন্দারা। এদিকে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সারা জেলায় এক অঘোষিত লকডাউন অবস্থা বিরাজ করছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহণ শ্রমিক, রিকশা চালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের কোন কাজ নেই। এতে বেকার হয়ে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাদের সংসার চালাতে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। আর এরই মাঝে যদি ডেঙ্গু হানা দেয় তাহলে অবস্থা কতটা বেগতিক হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এমনিতেই করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে যেতে পারে বলে ধারনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এই অর্থবছরের শুরুতে আট দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। করোনায় লকডাউনের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল এই এক মাসে অর্থনীতিতে এক লাখ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে দেশে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
আর এমন এক সময়ে আরেক ভয়াবহ ঘাতক ডেঙ্গু তার পদধ্বনি দিয়ে কাপন ধরিয়ে দিতে চাচ্ছে দেশে। এই দুই ঘাতক যদি এক হয়ে মানুষের শরীরে বাসা বাধে তাহেল কি হতে পারে একটু ভেবে দেখেছেন কি? কারন করোনা ও ডেঙ্গুর সিনটম প্রায় একই ধরনের। এতে বোঝা মুশকিল কার কি রোগে আক্রান্ত হলো।
করোনা সংকট সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে এখন ফরিদপুর জেলার সাধারন মানুষের মনের ঘরে তৈরি হয়েছে নানা ভয়। যেভাবে চারিপাশে ড্রেন খানাখন্দ তৈরি হয়ে রয়েছে তাতে ডেঙ্গু লার্ভা তৈরি হচ্ছে না তো আবার। এক্ষেত্রে ফরিদপুর পৌরসভা কতটুকু তাদের দায়িত্ব পালন করছে এমন প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে।
জানাযায় শীত যেতেই শুরু হয়েছে ফরিদপুর শহর জুড়ে তীব্র মশার উপদ্রব। দিনে-রাতে, ঘরে-বাইরে এসব মশার উপদ্রবে ইতিমধ্যে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। এতে ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। আর এতে জেলায় প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো।
ফরিদপুর পৌরসভার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এই পৌর এলাকার আয়তন ছিলো ৯টি ওয়ার্ডের ১৭.৩৪ বর্গ কি:মিটার কিন্তু এখন পরিধি বেড়ে ২৯টি ওয়ার্ড হয়েছে, যার আয়তন দাড়িয়েছে ৬৬.৫৪ বর্গ কি: মিটার। আর এই বিশাল এলাকার জন্য রয়েছে চারটি ফগার মেশিন যার দুটিই আবার বিকল। যদিও দু একদিনের মধ্যে বাকি দুটি মেশিন ঠিক হবে বলে পৌরসভা থেকে জানানো হয়েছে।
সরোজমিনে ফরিদপুর শহরের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কের পাশে ড্রেন ও ডোবাসহ নানাস্থানে জমে থাকা পানিতে মশার ভয়াবহ বিস্তার ঘটছে। রাস্তার পাশে খোলাস্থানে দু’তিনদিনের জমে থাকা তুলনামুলক স্বচ্ছ পানিতেও মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। এসব স্থানে তৈরি হচ্ছে মশার লার্ভা। এগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে দেখার প্রয়োজন রয়েছে ডেঙ্গু লার্ভা কিনা।
কমলাপুর এলাকার গৌতম নামে একজন জানান, পৌরসভার প্রস্তুতি তেমন দেখতে পাচ্ছি না। সামনেই ডেঙ্গু আক্রমন আসতে চলছে। একই সাথে করোনা জেকে বসেছে ফরিদপুরে সব মিলিয়ে আমরা খুব ভয়ে আছি। কারন হিসেবে তিনি বলেন করোনা ও ডেঙ্গুর সিনটম প্রায় একই ধরনের। এতে বোঝা মুশকিল কে কি রোগে আক্রান্ত হলো। তিনি বলেন পৌরসভার ফগার মেশিন বড় রাস্তা দিয়ে ছিটিয়ে চলে যায়। ছোট ছোট যেসব রাস্তা রয়েছে সেগুলোতে তারা আসেনা। এতে মহল্লার মানুষের সমস্যা হতে পারে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ড্রেনে জমে থাকা ময়লা পানিতে বংশবিস্তার করা মশার আবাসস্থলে ডেঙ্গু লার্ভার মাত্রা পরিমাপের কোন তৎপরতাও দেখা যায়না।
পলাশ নামে একজন বলেন, সম্প্রতি শহরে ড্রেন সংস্কারের কাজ হয়েছে। কিন্তু অনেক জায়াগায় সেটা পুরোপুরি শেষ হয়নি। এতে ড্রেনের ময়লা আবর্জনাযুক্ত উম্মুক্ত পানিতে গিজগিজ করছে মশা। এসব মশার উপদ্রবে তারা খুবই অতিষ্ঠ। ডেনের ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি পরিস্কার করা হয়না। সেখানে মশা বংশবিস্তার করছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়েছে। এখন জনমনে ডেঙ্গুর নিয়ে একটা আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে এ মশার উপদ্রবে।
স্থানীয় সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম বলেন, এবছর গরম মৌসুম শুরু না হতেই প্রচন্ড রকমে মশার উপদ্রব বেড়েছে। বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, ব্যবসা কেন্দ্র, শহর-গ্রাম সবখানেই একই দশা। মশা নিধনে যে ওষুধ ছেটানো হয় তা কতোটুকু কার্যকর তা নিয়েও সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, গত বছর যেভাবে ডেঙ্গুর উপদ্রব হয়েছিলো তাতে এবার যদি ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফরিদপুর পৌর মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু অবশ্য মশার উপদ্রবের কাথা স্বীকার করলেও মশা নিধনে পৌর কর্তৃপক্ষ অধিক তৎপর রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বড় বড় ড্রেন ও ছোট ছোট ড্রেনে ডিম নাশক ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে সকল জায়গায় মশা নিধনে কাজ করছি আমরা। মূল ডিম নিধন ও বাসা বাড়ী গুলোতে মশার লার্ভা নিধনে কাজ করছে আলদাভাবে পৌর টিম। এছাড়া চারটি ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধক ওষুধ ছেটানোর কাজ চলছে। এর ভিতর দুটি নষ্ট আশা করছি আজ কালের ভিতর ঠিক হযে যাবে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় মশা নিধনে সচেতনতামুলক প্রচারণা মাইকিং চালানো হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
No comments:
Post a Comment