ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী :
রাজশাহীর চারঘাট-বাঘাসহ সকল উপজেলায় লকডাউনের সুযোগে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন উৎসবে মেতে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অপরিচিত ও নিম্নমানের সাংবাদিকের সিন্ডিকেট অবৈধ পুকুর খননে যোগান দিচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন মহল এবং দলীয় নেতা-কর্মীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না। পুকুর খনননের কারনে ফসল ফলাতে না পেরে অনেক কৃষক পুকুর সন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।
শনিবার সকালে অনুসন্ধানে দেখা গেছে কয়েকটি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের ফসলি জমিতে চলছে পুকুর খননের মহাউসৎসব। বর্তমান করোন ভাইরাস বৃদ্ধির কারনে সরকারের নির্দেশনায় চলছে লকডাউন। আর সেই সুযোগে বিভিন্ন মহলের মদদে চলছে পুকুর খনন। দৈনিক ভোরের কাগজের বাঘা প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে দেখা গেছে উপজেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক নাজমুলের নামে চলছে পুকুর খনন। বিষয়টি নিশ্চত করার জন্য সম্পাদক বলেন, কে বা কারা তার নামের বদলাতে পুকুর খনন করছে তা তিনি জানেন না। অবৈধ পুকুর খনন বিষয়ে তিনি আপোষহীন।
বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের মধ্যে মাঝপাড়া, দিঘার চুনির বিল, কামারপাড়া বিল, পীরগাছা ও মনিগ্রম ইউনিয়নের হেলালপুর, কলাবাড়িয়া, হাবাসপুর এবং বাজুবাঘা ইউনিয়নের হিজলপল্লী, বারখাদিয়া, নওটিকা এলাকায় ভেকু দিয়ে ব্যাপকহারে কাটা হচ্ছে পুকুর। ওই সব এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য পুকুর খনন করা হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বিলে বিভিন্ন উৎপাদিত ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। পুকুর খননে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রায় ৫০ হাজার বিঘা জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবেনা। এদিকে পুকুর কাটার কারনে শত শত বিঘা জমিতে রোপন করা আম গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত ৩-৪ বছর ধরে পুকুর খননের কারণে এলাকার কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেন না। যেসব জমিতে বিগত সময়ে এক বছরে তিন ধরনের ফসল উৎপাদন হতো। বর্তমানে কোনো মৌসুমে ফসল ফলাতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে শত শত কৃষক মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
চারঘাট উপজেলা ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়ন, নীমপাড়া, ইউসুফপুর, শলুয়া এবং চারঘাট ইউনিয়ন । অপরদিকে বাগমারা, মোহনপুর, তানোর, দূর্গাপুর, পুঠিয়া, গোদগাড়ির বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলছে পুকুর খনন। এবিষয়ে ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের আসতে দেখি, কিন্ত তার কোন ফলাফল পাই না। অর্থের বিনিময়ে অপরিচিত কিছু পত্রিকার সাংবাদিক এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত আছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা জানান, বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন বিলগুলোতে যেভাবে পুকুর খনন করা হচ্ছে, তাতে ২-৩ বছরের মধ্যে আর কোন ফসলি জমি থাকবে না। এবিষয়ে উপজেলা কৃষিকর্মকর্তারা গনমাধ্যকে বলেন, যারা পুকুর খনন করবেন তারা উপজেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করা বিধান রয়ছে। ওই আবেদনের পরিপেক্ষিতে কৃষি কর্মকর্তা সরজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ছাড় পত্র দিবেন। কিন্ত এই সকল বিষয়ে কোন তোয়াক্কা করা হয়না। যার দরুন যে যার খেয়াল খুশিতে কৃষি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করছে।
প্রসঙ্গত. বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চারঘাট ইউএনও সৈয়দা সামিরা ও বাঘা উপজেলা ইউএনও পাপিয়া সুলতানা বলেন, অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচলনা করে অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।