টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলা আসামি টাঙ্গাইল-৩(ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মানহানী মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার(৯ জুন) টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড়মনি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে(পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
গোলাম কিবরিয়া বড় মনি টাঙ্গাইল-২(গোপালপুর-ভ‚ঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই। তিনি টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর উপজেলা আমলী আদালতের বিচারক শামসুল আলম মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জানান, গত ৭ জুন(সোমবার) আমানুর রহমান খান রানা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, তার (রানার) বড় ভাই আমিনুর রহমান খান বাপ্পির হত্যাকারী গোলাম কিবরিয়া বড় মনি এবং তার ছোট ভাই তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি। এছাড়া তারা দুই ভাই (গোলাম কিবরিয়া বড় মনি ও তানভীর হাসান ছোট মনির) জার্মানিতে অস্ত্রের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। অথচ আমিনুর রহমান খান বাপ্পি হত্যার সাত বছর আগেই তারা দুই ভাই জার্মানিতে চলে যান। দেশে ফেরেন বাপ্পি হত্যার ঘটনার ৬-৭ বছর পর। বাপ্পি হত্যাকান্ডের পর তার বাবা আতাউর রহমান খান বাদি হয়ে যে মামলা দায়ের করেন সেখানে গোলাম কিবরিয়া বড় মনি বা তানভীর হাসান ছোট মনির কারও নাম ছিল না। পরবর্তীতে পুলিশ তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র যে দাখিল করেন সেখানেও তাদের কারও নাম নেই। তাছাড়া তারা জার্মানিতে মোটরগাড়ি কেনা-বেঁচার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। অথচ মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গোলাম কিবরিয়া বড় মনি ও তার পরিবারের সদস্যদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতি হয়েছে। এতে তার পাঁচ কোটি টাকার সম্মানহানী ঘটেছে।
মামলার বাদি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি বলেন, গত সোমবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আমানুর রহমান খান রানা বলেন, ‘আমি জেলখানা থেকে বের হওয়ার পর একটি গোপন বৈঠকে মিলিত হয় হাইব্রিডরা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, জামিলুর রহমান মিরন (জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), ছোট মনি (টাঙ্গাইল-২(গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য), বড় মনি (টাঙ্গাইল বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব) টাঙ্গাইলে সুকৌশলে আরও একটি অপকর্ম করে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে আমাকে নতুন করে ফাঁসাবে’। টাঙ্গাইলে হত্যা, লুট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে অন্যায়ের রাজত্ব কায়েমকারী হাইব্রিড মার্কা আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান আমানুর রহমান খান রানা। অথচ মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গোলাম কিবরিয়া বড় মনি ও তার পরিবারের সদস্যদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাজনৈতিকভাবে তার পাঁচ কোটি টাকার সম্মাননহানী ঘটেছে। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুন তপন রবিদাস নামে এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন আমানুর রহমান খান রানা তাকে রিভলবার ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেন। এ অভিযোগ খন্ডন করতে আমানুর রহমান খান রানা গত সোমবার একই স্থানে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে লিখিত বক্তব্যে বড় মনি ও ছোট মনিরের সম্পর্কে অভিযোগগুলো উত্থাপন করেন।
প্রকাশ, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পুলিশি তদন্তে ফারুক হত্যা মামলায় তৎকালীন এমপি রানা ও তার অপর তিন ভাই জড়িত থাকার প্রমাণ বেরিয়ে আসে। তখন তারা আত্মগোপনে চলে যান। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ওই হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান রানা আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। একই বছরের ৩ ফেব্রæয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
ওই মামলায় সাবেক এমপি রানা ছাড়াও তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪জন আসামি রয়েছেন। প্রায় ২২ মাস আত্মগোপন ও ৩৪ মাস ২১ দিন কারাবাসের পর ২০১৯ সালের ৯ জুলাই জামিনে মুক্তি পান আমানুর রহমান খান রানা। রানার অপর ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি আত্মসমর্পন করে কারাগারে রয়েছেন। তার অপর দুই ভাই জাহিদুর রহমান খান কাকন ও সানিয়াত খান বাপ্পা এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।
No comments:
Post a Comment