ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ঘিরে সাজ সাজ রব, পদ বঞ্চিতদের মূল্যায়নের দাবি - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, মে ০৭, ২০২২

ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ঘিরে সাজ সাজ রব, পদ বঞ্চিতদের মূল্যায়নের দাবি

 


শহিদুল ইসলাম, ফরিদপুর থেকে ফিরে :
আগামী ১২ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ। এ যাবত কালের সবচেয়ে বড় মঞ্চ তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এ সম্মেলনের শুধু মঞ্চ তৈরিতেই ব্যয় করা হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা। ১ লাখ ৫ হাজার বর্গফুট জুড়ে তৈরি এ মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ারের বসার ব্যবস্থা থাকছে। কাল বৈশাখী ঝড়ের চিন্তা মাথায় রেখে লোহার পোল দিয়ে মূল মঞ্চের কিছু অংশ জুড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ মঞ্চ। যাতে কালবৈশাখী ঝড়েও মঞ্চ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের এবারের এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধান অতিথি রয়েছেন প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী জাফরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম মেম্বার ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।


এই সম্মেলন ঘিরে ইতোমধ্যে তৃনমূল আওয়ামীলীগে চাঙ্গা ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। শহরের রাস্তা গুলো ব্যানার ফেস্টুন ও গেট দিয়ে সাজানো হচ্ছে তাদের পদ চেয়ে। দলীয় সূত্রে জানাযায়, মোশারফ জামানায় তৃনমূল আওয়ামীলীগকে পাশ কাটিয়ে যে নব্য লীগ গঠন হয়, ধারনা করা হচ্ছে সেই জামানার অবসান হতে চলছে এবার। যারা সে সময় সুযোগ সুবিধা নিয়ে পদ সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করেছে তাদেরকে পাশ কাটিয়ে পদ বঞ্চিত মূল আওয়ামীলীগের নেতাদের মধ্যে থেকে কমিটি গঠনের তোরজোর শোনা যাচ্ছে নেতাদের মুখ থেকে। এবার মূল্যায়ন করা হবে আওয়ামীলীগের সুবিধা বঞ্চিত নেতাদের বলে দলীয় সূত্রে জানাগেছে।
 
দল ক্ষমতা থাকাকালিন গত বারো বছর চরম নির্যাতন ও উৎকন্ঠায় থাকা তূনমূলের নেতাকর্মিদের সাথে সংযোগ থাকা নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে বলে আওয়ামীলীগ নেতারা জানিয়েছেন। এজন্য তারা তাকিয়ে আছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখের দিকে।  

এদিকে সম্মেলন ঘনিয়ে আসায় সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, মোশাররফ এর পতনের পর জেলার রাজনীতিতে মোশারফ এর সমর্থনে থাকা অনেকে এখন ত্যাগী সেজেছেন। রাতারাতি ভোল পাল্টানো এসব ত্যাগী সাজা নেতাদের হাতে আবার ক্ষমতা গেলে দলের পরির্বতন তো হবেই না বরঞ্চ ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বেশি বলে মনে করেন তারা। তবে তাদের শংকা অপলবিংয়ের কারণে সুবিধা বঞ্চিত ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে যদি কমিটি গঠন হয় এ নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। আর এক্ষেত্রে তারা জেল জুলুম খাটা দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামে ভূমিকা রাখা নেতাদের মূল্যায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন।

জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ঝর্ণা হাসান বলেন, ফরিদপুরে একটি জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে রাজবাড়িতেও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করা হয়েছে। তারচেয়েও বড় আকারের প্রন্তুতি রয়েছে আমাদের। দলের লোকজন আমাকে এবার সাধারন সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই। নেত্রি যদি দেয় তাহলে আমি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।  

শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম মিঠু জানান, গত বারো বছরের মোশারফ জামানায় আমি নব্য আওয়ামীলীগ এর জয়জয়কার সময়ে ঢাকা চলে গিয়েছি। কখনো কেউ বলতে পারবে না আমি তার সাথে আমাকে দেখেছে। আমরা চাইবো দীর্ঘদিন পদ বঞ্চিত জেলার পরীক্ষিত লড়াই সংগ্রামে ভূমিকা রাখা নেতাদের দিয়ে কমিটি করা হইক। নেত্রীর কাছে এই আমাদের চাওয়া পাওয়া।  

এবারের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য বর্ষিয়ান নেতা বিপুল ঘোষ বলেন, ২০০৮ সালে আমার দল ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমাকে দলীয় কর্মকান্ড থেকে সড়িয়ে দেয়া হয়। এক প্রকার ঘর বন্দি অবস্থায় চলে আমার জীবন। দলের জন্য দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের উপর কাজ করেছি। আশা করছি শেষ বয়সে আমার নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করবে। তিনি বলেন, যারা সুবিধা নিয়ে পদ সহ নানা ভাবে লাভবান তারা মিথ্যা প্রচারনায় ব্যস্ত এনিয়ে আমার কোন কথা নেই। কারন তারা নানা ভাবে আমার অসুস্থ্যর কথা বলে কেন্দ্রে গিয়ে। আসলে তারা জানে দলের জন্য কি ভূমিকা ছিলো এই জন্য তারা ভয় পাই। ১৭ বারের জেল জীবনের বেশির ভাগ যৌবন কাল কেটেছে জেলে। আশা করি এবারের সম্মেলনে নেত্রী ত্যাগী পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করবে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, সম্মেলন বাস্তবায়নে সবধরনের প্রস্ততিই গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালোভাবেই চলছে। মঞ্চ তৈরির কাজও ভালোভাবেই চলছে। আমি এবারের সম্মেলনে প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, সম্মেলন সফল ও সার্থক করে তুলতে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সর্বাত্মক শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। কোনপ্রকার অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো না বলে আশা করছি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছে। আশা করছি একটি সফল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এবারের সম্মেলনে জেলার আওয়ামী তৃনমূলের আস্থা পূরণ হবে, নাকি চোরাগোলির লবিং দিয়ে আবারও হাইব্রীড বা ভোগিরা ফরিদপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে সেটা দেখার জন্য আগামী ১২ তারিখের সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা ফরিদপুরবাসী। এজন্য তারা তাকিয়ে আসেন দলের একমাত্র আশা ভরসার স্থল নেত্রীর আস্থার উপর এমনটাই জানিয়েছেন তারা।

Post Top Ad

Responsive Ads Here