![]() |
ভোলাহাটে মাত্র ৪ মাস ১০ দিনে উন্নয়নের ছোঁয়া রেখে গেলেন ইউএনও মোঃ মনিরুজ্জামান |
এম. এস. আই শরীফ, ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ):
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ছোট্ট কিন্তু সম্ভাবনাময় উপজেলা ভোলাহাট। দীর্ঘদিন অবহেলিত এই অঞ্চলের উন্নয়নে গত চার মাস দশ দিনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি যেমন ছিলেন কর্মনিষ্ঠ, তেমনি ছিলেন মানবিক। তার অফিসের দরজা ছিল সবসময় সাধারণ মানুষের জন্য খোলা। উপজেলা প্রশাসনের কাজের পাশাপাশি অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি ছিলেন সদা প্রস্তুত। এমনকি দুপুরের খাবারের সময় ভুলে গিয়ে জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন তিনি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বদলির নির্দেশে ভোলাহাট ছাড়ার সময় সাধারণ মানুষের চোখে জল ছিল। অনেকের মতে, “মনিরুজ্জামান স্যার ছিলেন ভোলাহাটের প্রকৃত গার্ডিয়ান।” তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন পার্শ্ববর্তী গোমস্তাপুর উপজেলার ইউএনও জাকির মুন্সি, যিনি আপাতত অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
চার মাসের স্বল্প সময়ে তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ শুরু করেন।
তার উদ্যোগে—
বজরাটেক পর্যটন এলাকাকে আধুনিক রূপে সাজানোর জন্য প্রণয়ন করা হয় প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকার প্রকল্প,
আম চত্বর ও বিল ভাতিয়া বিল এলাকায় গাছ লাগানো, রাস্তা সম্প্রসারণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ হাতে নেওয়া হয়,
মেডিকেল মোড় ও সুরানপুর এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সংস্কার সম্পন্ন হয়, পাশাপাশি ১.৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প রেখে গেছেন, যা বাস্তবায়িত হলে অবকাঠামো ও বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাবে উপজেলাবাসী।
ভোলাহাটের ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনেও তিনি ছিলেন সবচেয়ে সক্রিয়। স্থানীয় তরুণ ফুটবলারদের ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন এবং তাদের জন্য কাজ করার পরিকল্পনা ছিল তার। তিনি বিশ্বাস করতেন, খেলাধুলার মাধ্যমেই তরুণ সমাজকে সঠিক পথে রাখা সম্ভব।
বিদায়ের আগে তিনি লিখেছেন— “ভোলাহাটের প্রকৃতি ও মানুষের ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। অনিয়ম দূর করে প্রকৃত উপকারভোগীদের সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কারও প্রতি কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার পরবর্তী স্টেশন ঈশ্বরদী, পাবনা—সবার দোয়া চাই যেন আমানত ঠিকভাবে রাখতে পারি।”
ভোলাহাট থেকে বিদায় নিলেও ইউএনও মনিরুজ্জামান রেখে গেছেন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত—দায়িত্ব, সততা ও মানবিকতার। তার অল্প সময়ের কাজগুলো প্রমাণ করে, ইচ্ছা আর নিষ্ঠা থাকলে স্বল্প সময়েও পরিবর্তন আনা সম্ভব।