![]() |
মধুমতির পেটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০০ ঘর, সরকারি মালামাল বিক্রির অভিযোগ |
ফরিদপুর অফিস:
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণের ঘরগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এই সুযোগে কিছু ব্যক্তি রাতের আঁধারে নামমাত্র মূল্যে সরকারি মালামাল ভাঙারি দোকানে বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতি নদীর তীরে ১৩০টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছরের মধ্যে বসবাসযোগ্য হওয়া ঘরগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ে। ২০২১ সাল থেকে নদীর ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং গত তিন বছরে কমপক্ষে ১০০টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
বর্তমানে অবশিষ্ট ছিল একটি অফিসকক্ষসহ ৩০টি ঘর। চলতি বছরে নদী ভাঙনের কারণে অফিস কক্ষসহ চারটি ঘরও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই ভাঙনের সুযোগে কয়েকজন বাসিন্দা ঘরের ঢেউটিন, লোহার অ্যাংগেল ও ইট উঁচু করে ভ্যানে করে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাপুলিয়া গ্রামের কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ইমরুল শেখ ইমুল, আরিফুল শেখ ও মুকুল শেখ রাতের আঁধারে ভ্যানে করে কিছু ঘরের মালামাল পাশের বোয়ালমারী উপজেলার সহস্রাইল বাজারের বিভিন্ন ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেছেন। এখনো তাদের বাড়ির সামনে কিছু মালামাল রাখা রয়েছে। যে কোনো সময় তা বিক্রি করা হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ১০ দিনের মধ্যে মধুমতি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কমপক্ষে চারটি ঘর ও একটি অফিস ঘর। প্রকল্পের বাসিন্দা ইমরুল শেখ ও আরিফুল শেখের ঘরের সামনে এখনও লোহার অ্যাংগেল ও ইটের স্তূপ রাখা আছে।
ইমরুল শেখ জানান, নদীতে অফিস ঘর ভেঙে যাচ্ছিল, তাই অফিস ঘরের মালামাল খুলে নিজের ঘরের সামনে রাখা হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন যে, মালামাল ভাঙারির দোকানে বিক্রি করা হয়েছে। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে একবার ১০ মণ লোহার মালামাল বিক্রি করেছিলেন, যা পরে ইউএনও অফিস জানার পর ফেরত দিয়ে মুক্তি পান। এরপর থেকে তিনি আর কোনো সরকারি মালামাল বিক্রি করেননি।
আরিফুল শেখের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, নদী ভাঙনে তার দেবরের ঘর ভেঙে যাচ্ছিল, তাই মালামাল তাদের কাছে রাখা হয়েছে। এটি বিক্রি করা হবে না, বরং নতুন একটি ঘর নির্মাণে ব্যবহার হবে।
চাপুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সভাপতি আকুব্বর শেখ জানিয়েছেন, প্রকল্পে শুরুতে ১৩০ পরিবার বসবাস করত, কিন্তু নদী ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে মাত্র ৩০ পরিবার অবশিষ্ট। তিনি জানান, প্রকল্পের ঘরগুলোর মালামাল গোপনে বিক্রি হচ্ছে কিনা তিনি নিশ্চিত নন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম কালু বলেন, নদীর ভাঙনের কারণে কিছু লোক সরকারি মালামাল বিক্রি করছে। ঘরগুলি যখন নির্মাণ করা হয়েছিল, তখন নদী অন্তত এক কিলোমিটার দূরে ছিল, কিন্তু বর্তমানে নদী ধীরে ধীরে প্রকল্পের দিকে এগিয়ে এসেছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল জানিয়েছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ঘর সরকারি সম্পত্তি এবং সরকারি মালামাল গোপনে বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তিনি আরও জানান, খোঁজ-খবর নিয়ে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।