![]() |
| সুন্দর আচরণ: যে আমলে ভারী হবে আমলনামা |
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী:
সুন্দর ব্যবহার মানুষের জীবনে শান্তি, সম্পর্কের দৃঢ়তা এবং সমাজে মর্যাদা এনে দেয়। একটি সদাচরণ যেমন মানুষের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি একটি অশোভন আচরণ গভীর কষ্টও দিতে পারে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে মানুষের প্রতি ভদ্রতা, কোমল ভাষা ও বিনয়ী আচরণ প্রদর্শন করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।
ভালো ব্যবহার বলতে বোঝায়—কারও সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলা, দেখা হলে সালাম দেওয়া, কুশল জিজ্ঞেস করা, রূঢ় ভাষায় কথা না বলা, ঝগড়া–ফ্যাসাদ থেকে দূরে থাকা, রাগ বা ধমকের সুর এড়িয়ে চলা, গীবত–পরনিন্দা না করা, কাউকে অপমান না করা এবং হাসিমুখে আন্তরিকভাবে কথা বলা। আর বিপদে সহানুভূতি প্রকাশ করা, অন্যের দুঃখ–কষ্টে সাড়া দেওয়া—এসবই সুন্দর আচরণের অংশ।
সুন্দর আচরণ সবার মন জয় করে। যার ব্যবহার যত সুন্দর, সমাজে তার সম্মান তত বেশি। বিপরীতে, যার আচরণ খারাপ, সবাই তাকে এড়িয়ে চলে। সুন্দর ব্যবহার মানুষের ভেতরের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে এবং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম মাধ্যম। পরকালে এর বিনিময় হিসেবে প্রতিশ্রুত রয়েছে জান্নাত।
হাদিসে এসেছে—হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে ভারী কিছু থাকবে না। অশ্লীল ও কটু কথাবার্তা আল্লাহ পছন্দ করেন না। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার আচরণের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।” – সুনানে তিরমিজি
আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, “মুমিনকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে দুটি বিষয়—আল্লাহর ভয় এবং সুন্দর আচরণ। মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেবে মুখ ও লজ্জাস্থানের পাপ।” – সুনানে তিরমিজি
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, “সুন্দর আচরণই নেক আমল।”
সুনানে তিরমিজির আরেক হাদিসে তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে যার আচার–ব্যবহার সবচেয়ে সুন্দর, সে-ই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে।”
মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “অশোভন কথা ও আচরণের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যার আচরণ সুন্দর, তার ইসলামও সুন্দর।”
সুনানে আবু দাউদে রয়েছে— “যার ব্যবহারে সৌন্দর্য রয়েছে, তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি ঘরের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।”
অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, “যে বিনয়, নম্রতা ও সুন্দর আচরণের অধিকারী হয়, সে দুনিয়া–আখিরাতের সব কল্যাণই লাভ করে। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং ভালো আচরণ ঘর–বাড়িতে বরকত এবং আয়ু বৃদ্ধি করে।” – আহমদ
সুন্দর আচার–ব্যবহার শুধু সামাজিক শান্তিই আনে না, বরং আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়ার এবং জান্নাত লাভেরও কারণ হয়। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত তার কথাবার্তা, আচরণ ও ব্যবহার সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সুন্দর ব্যবহার ও উত্তম চরিত্রের তাওফিক দান করুন। আমিন।

