![]() |
| রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ টার্ফ, ৫ লাখ টাকার ঘুষের অডিও |
নিজস্ব প্রতিবেদক । কক্সবাজার:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প এলাকায় অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক আধুনিক ফুটবল টার্ফ নির্মাণকে ঘিরে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে এবং প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া এসব টার্ফ গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গা মাদক কারবারিদের অর্থ ব্যবহার করে এসব ফুটবল টার্ফ নির্মাণ ও পরিচালনা করা হচ্ছে। টার্ফকে কেন্দ্র করে নিয়মিত গণজমায়েতের মাধ্যমে একটি চক্র লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্য চালানোর চেষ্টা করছে।
অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টার্ফগুলোর প্রকৃত মালিকানা ও অর্থায়ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে আসলেও তা আড়াল করতে পরিচালনার দায়িত্ব স্থানীয় কিছু ব্যক্তির নামে দেখানো হচ্ছে।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে মাদক কারবারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চললেও সম্প্রতি টার্ফের মতো বিনোদনমূলক স্থাপনার আড়ালে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মেলামেশা বাড়ছে। এতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংঘাত ও নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে মধুরছড়া ও জামতলীসহ অন্তত চারটি ফুটবল টার্ফের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। থাইংখালী ক্যাম্প-১২ এলাকায় ‘আকতার’ নামে এক ব্যক্তির নির্মিত একটি টার্ফে নিয়মিত রোহিঙ্গাদের দলবদ্ধভাবে খেলাধুলা ও জমায়েতের আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এসব টার্ফের কিছু অংশ বন বিভাগের জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে এবং সিআইসি বা আরআরআরসি থেকে কোনো লিখিত অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
এদিকে হাতে আসা একটি কল রেকর্ডে শোনা গেছে, ক্যাম্প-১২-এর সিআইসিকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে মৌখিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বিষয়টি নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। নির্দিষ্ট তথ্য পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্মসচিব) আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, লিখিতভাবে কোনো টার্ফ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। জমির শ্রেণি যাচাই করে প্রয়োজন হলে বন বিভাগকে সম্পৃক্ত করা হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ক্যাম্প-১২ এলাকায় দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার জহির উদ্দিন জানান, টার্ফ নির্মাণের বিষয়টি তারা আগে জানতেন না। হঠাৎ সেখানে রোহিঙ্গাদের খেলাধুলা করতে দেখা গেছে। সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
সচেতন মহলের মতে, খেলাধুলার মতো বিষয় থেকেও ক্যাম্প এলাকায় সংঘাতের সূত্রপাত হতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তারা আশঙ্কা করছেন, অবৈধ টার্ফকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

