![]() |
| পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দৈনিক আয় লাখ টাকা |
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে গরু, ইয়াবা, আইসসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য প্রবেশ এবং বাংলাদেশ থেকে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেল পাচার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে—এই চোরাচালান কার্যক্রমের বিনিময়ে প্রতিদিন লাখ টাকার বেশি চাঁদা নিচ্ছে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির একটি চক্র। স্থানীয়দের কাছে ‘পুলিশের অঘোষিত ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত মো. ফোরহান ওরফে সোহেল প্রতিদিন দুই লাখ টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে ফাঁড়ির ইনচার্জ শোভন কুমার সাহার কাছে পৌঁছে দেন বলে দাবি উঠেছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা এবং জনপ্রতিনিধির সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পথ দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে ইয়াবা, আইস ও মিয়ানমারের গরু। বিপরীতে পাচার হচ্ছে ভোজ্যতেল, চাল-ডাল, সিমেন্ট, পেঁয়াজ-রসুনসহ নিত্যপণ্য।
চোরাকারবারিদের কাছ থেকে নেয়ার হার—প্রতি বস্তা পণ্য: ৫০০ টাকা,মিয়ানমার থেকে আসা প্রতি গরু: ২,০০০ টাকা,অবৈধ যানবাহন চলাচলে: মোটরসাইকেল ১,০০০, টমটম ২,০০০, জিপ/পিকআপ ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত।এক দিনে ১০০ গরু এলে চাঁদার পরিমাণ কয়েক লাখ টাকায় পৌঁছে যায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সীমান্তবর্তী গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের প্রধান বাজার গর্জনিয়া হাট। সপ্তাহে দু’দিন বসা এই হাটকে চোরাই গরুর ‘ট্রানজিট হাট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয়রা।গত বছর প্রায় আড়াই কোটি টাকায় ইজারা হওয়া এই বাজার এবার ইজারা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকায়, যা দশ গুণ বেশি।বাজার ইজারাদারদের দাবি—বাজারের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চোরাই গরুর লেনদেন ও মাদকের চালান ধরে রাখা হয়।
২০২৪ সালে প্রায় ৩ লাখের বেশি গরু মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসব গরুর বেশিরভাগই গর্জনিয়া বাজার ঘুরে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্র বলছে, দুই বছর আগে আলোচিত চোরাচালানকারী শাহীন ডাকাতের সঙ্গে জড়িয়ে সীমান্তপথে অবৈধ বাণিজ্যে নামেন সোহেল। পরে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শোভন কুমার সাহার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি।
সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, “আগে পুলিশের হয়ে টাকা তুলতাম, এখন আর করি না। কয়েক মাস আগে গর্জনিয়া ছেড়ে চকরিয়ায় এসেছি। কেন খুঁজছে পুলিশ—জানি না।”
গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শোভন কুমার সাহা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, “সোহেলকে আমি চিনি না। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়।”
রামু থানার ওসি মো. আরিফ হোসাইন জানান, “পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলার খবর পেয়েছি। সোহেলকে খুঁজছি। থানার কোনো সদস্য জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান বলেন,“আমি নতুন যোগ দিয়েছি। অভিযোগ সত্য হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধ করলে কেউ ছাড় পাবে না।”

