![]() |
| চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জামিনে মুক্তি বাণিজ্যের অভিযোগ |
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তিকে কেন্দ্র করে ‘ঘুষ–বাণিজ্য’ চলছে—এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, জামিননামা কারাগারে পৌঁছানোর পরই শুরু হয় দরকষাকষি। ‘কাগজ যাচাই-বাছাই’ এবং ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’-এর নামে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা হয়।
এতে আর্থিক লেনদেন অনুযায়ী দুই ঘণ্টায় মুক্তি মিললেও ঘুষ না দিলে তিন দিন পর্যন্ত মুক্তি আটকে রাখা হয় বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। বিশেষ করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল বন্দিদের টার্গেট করে ৫০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের নামে বন্দিদের সারাদিন জেলগেটে বসিয়ে রেখে পেছনে চলে দরকষাকষি। সাম্প্রতিক সাতটি জামিনে মুক্তির ঘটনায় জেল সুপার, ডেপুটি জেলার (হাজতি ব্রাঞ্চ) এবং পুলিশের ডিএসবি-সিটিএসবি সদস্যদের নাম এসেছে।
কারাবিধি অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেটি বহু ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, অনেক সময় জামিন সংক্রান্ত কাগজে ত্রুটি থাকায় মুক্তি বিলম্ব হয়। তিনি ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। ডেপুটি জেলার তৌহিদুল ইসলামও অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করেন।
অপরাধবিষয়ক বিশ্লেষক ও আইনজীবী জাফর ইকবাল বলেন, জামিনের পরও ‘যাচাই-বাছাই’য়ের নামে বন্দিকে আটকে রাখা আইনে অপরাধ। তার দাবি, কারা কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো টাকা পেলেই দ্রুত যাচাই সম্পন্ন হয়। গত তিন মাসে তার চেম্বারে এমন দুটি ঘটনার প্রমাণ এসেছে বলেও জানান তিনি।
ঘটনার মধ্যে রয়েছে—গত ২৭ নভেম্বর অস্ত্র মামলায় জামিন পাওয়া তৌহিদুল ইসলাম মামুনকে জামিননামা পৌঁছানোর পরও তিন দিন আটকে রাখা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ডেপুটি জেলার ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন। আদালতের নজরে বিষয়টি এলে দেখা যায়, বালামে ‘মুক্তি’ দেখানো হলেও বাস্তবে তাকে আটক রাখা হয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বন্দির বাবা জেলগেটে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
আইনজীবী উজ্জ্বল সরকার অভিযোগ করেন, কোনো নতুন মামলা না থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামুনকে আটকে রাখা হয় এবং পরে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর চেষ্টা করা হয়। পরিবারের সদস্য আমিনের দাবি, ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় এ হয়রানি করা হয়েছে।
এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ১১ নভেম্বর নিষিদ্ধ সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সায়েম প্রায় সাত লাখ টাকার চুক্তিতে কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ ঘটনার জেরে ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়াকে বদলি করা হয়। তবে জেলার সৈয়দ শাহ্ শরীফ ও জেল সুপার ইকবাল হোসেন অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেন। পুলিশের ডিএসবি সদস্য আল আমিন বলেন, তাদের কাছে সায়েমকে আটকে রাখার মতো কোনো মামলা ছিল না।
একইভাবে, গত ১ ডিসেম্বর বাঁশখালীর এক আওয়ামী লীগ নেতা এক লাখ টাকা দিয়ে দুই ঘণ্টায় মুক্তি পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ১০ নভেম্বর আরও একজন আইনজীবী একইভাবে ঘুষ দিয়ে দ্রুত মুক্তি পান।
জেল ফটকে অপেক্ষমাণ রোজিনা আক্তার জানান, তার স্বামী সোমবার জামিন পেলেও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত মুক্তি পাননি। কারা কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট সময়ও জানায়নি। তার দাবি, প্রতিদিন বহু পরিবার একই হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

