![]() |
| ঢাকায় পিসিসিপির আলোচনায় শান্তিচুক্তির পুনর্মূল্যায়নের দাবি |
মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে “পার্বত্য শান্তিচুক্তির প্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও পুনর্মূল্যায়ন” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এ সভায় বক্তারা বলেন, শান্তিচুক্তির ২৮ বছর পার হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ প্রত্যাশিত শান্তি, সমতা ও টেকসই উন্নয়ন থেকে এখনো বঞ্চিত।
বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে কিছু স্বার্থগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে। মানবাধিকার কর্মী বা সিভিল সোসাইটির পরিচয়ে অনেকেই একপেশে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, যা রাষ্ট্রকে দুর্বল দেখায় এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অপরাধকে আড়াল করে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জেএসএস (সন্তু লার্মা গ্রুপ), ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) এবং কেএনএফের সন্ত্রাসী তৎপরতা এখনো শান্তি ও উন্নয়নের পথে বড় বাধা। অপহরণ, চাঁদাবাজি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি, গ্রাম পোড়ানো ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মতো কর্মকাণ্ড পাহাড়ি-বাঙালি মানুষের জীবনকে জিম্মি করে রেখেছে।
তারা বলেন, কেএনএফের সাথে উগ্র জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণ বিনিময়সহ নানামুখী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ স্থানীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। কিন্তু অনেক মানবাধিকারকর্মী এসব গুরুতর অপরাধ সম্পর্কে নীরব থাকেন। এই নির্বাচিত নীরবতা উদ্দেশ্যমূলক এবং বিভাজন সৃষ্টিকারীদের শক্তিশালী করে।
বক্তারা দেশের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলে ধরার সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী তৎপরতা, চাঁদাবাজি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়গুলো সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত। এসব তথ্য আড়াল করলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
বক্তারা পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, পাহাড়ি-বাঙালি সব জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার, সমান সুযোগ এবং মর্যাদা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। বিভাজন সৃষ্টি করে এমন রাজনৈতিক প্রচারণা—যেমন “জধঢ়ব ধং বিধঢ়ড়হ”, “ঙপপঁঢ়ধঃরড়হ”, “ঝঃধঃব-ংঢ়ড়হংড়ৎবফ ারড়ষবহপব”—বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।
তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কোনো ব্যক্তিগত মালিকানাধীন অঞ্চল নয়। স্থায়ী শান্তির জন্য প্রয়োজন উন্নয়ন, নিরাপত্তা, জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রাসেল মাহমুদ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান।
প্রধান অতিথি ছিলেন—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল ইউসুফ,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির আহবায়ক জিয়াউল হক,পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা ও পিসিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আহমেদ রাজু,বান্দরবান জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট জয়নাল আবেদিন ভুইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াস মাতাব্বর,ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কাওছার আলী, পিসিসিপি ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি আল আমিন ও আরও অনেকে।
বক্তারা শান্তিচুক্তির কার্যকর বাস্তবায়ন, নিরাপত্তা জোরদার, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দমন এবং সব জনগোষ্ঠীর সমান অধিকারের প্রতি পুনর্ব্যক্ত প্রতিশ্রুতি জানান।

