ফরিদপুরে হাটের ইজারা নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Monday, April 16, 2018

ফরিদপুরে হাটের ইজারা নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১


সময় সংবাদ ডেস্কঃ
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় চর কৃষ্নপুর ইউনিয়নে হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে কৃষ্ণপুর বাজারসহ আশপাশের পরিস্থিত উত্তাল হয়ে ওঠে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের কোপে নিহত হন রাধানগর গ্রামের মান্নান সিকদার (৫৫)।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার আধিপত্য নিয়ে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির বিল্লাল হোসেন এবং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী আবদুল কাইউম ওরফে হিরুর মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সাবেক চেয়ারম্যানের গ্রুপকে এখন নেতৃত্ব দেন ইউনিয়নের নিজগ্রামের বাসিন্দা ও কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আখতারুজ্জামান ওরফে তিতাস। দুই পক্ষের বিরোধ আরও বাড়ে কৃষ্ণপুর হাটের ইজারা নিয়ে। নতুন বাংলা বছরে কৃষ্ণপুর হাটের ইজারা আখতারুজ্জামানের সমর্থক কুদ্দুস সরদার পান। গতবার এ হাটের ইজারা নিয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন। এ বছর বিল্লার হোসেনের ভাই ইনজামুল হক ওই হাটের ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পূর্বের বিরোধ ও হাটের ইজারার দ্বন্দ্বে ১০ এপ্রিল থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকার বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, আজ সকাল ছয়টা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে শৈলডুবি, পশ্চিম ভাষাণচর, উত্তর ভাষাণচর, চাঁদপুরসহ কয়েক গ্রামের লোক অংশ নেয়। আর সাবেক চেয়ারম্যানের পক্ষে রথখোলা, নিজগ্রাম, রামনগর, তালমা, রাধানগর, ভাবুকদিয়া, ডাঙ্গিসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন অংশ নেয়। দুই পক্ষের হাজার হাজার লোক ঢাল, সড়কি, বল্লম, টেঁটা, ইটসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।


থেমে থেমে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষ চলে। সকাল সাতটার দিকে কৃষ্ণপুর বাজারে প্রতিপক্ষের কোপে নিহত হন সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থক রাধানগর গ্রামের মান্নান সিকদার। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। এর মধ্যে ছয়জন পুলিশের গুলিতে আহত হন। পুলিশেরও আট সদস্য ইটের আঘাতে আহত হন। সংঘর্ষের সময় কৃষ্ণপুর বাজারে কমপক্ষে ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ইউপি চেয়ারম্যান ফকির বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করেন, গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরে কোর্ট এলাকায় তাঁর ভাইয়ের ওপর প্রতিপক্ষ হামলা চালায়। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করলে গতকাল বিকেলে ও আজ সকালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন কৃষ্ণপুর বাজারের ইজারা পান। এ বছর আমার এক সমর্থক বাংলা নতুন বছর থেকে কৃষ্ণপুর বাজারের ইজারা পেয়েছেন। বিল্লাল হোসেনের ভাই শিডিউল জমা দিয়েও ইজারা পায়নি। গতকাল ছিল ওই বাজারের প্রথম হাট। আমরা যাতে হাটের ইজারা ঠিকমতো তুলতে না পারি, এ জন্য ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর ভাইয়ের ওপর কথিত হামলার গুজব ছড়িয়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল সংঘর্ষে পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে কাজ করেছে।
সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশীদ। তবে পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ করেছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও পক্ষ হয়ে কাজ করিনি। দুই পক্ষের মাঝে অবস্থান করে সংঘর্ষ ঠেকানোর চেষ্টা করেছি।’
ওসি জানান, সংঘর্ষে পুলিশের আট সদস্য ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩৭টি রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ জানায়নি।

No comments: