হবিগঞ্জ
থেকে: হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যার ঘটনায়
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নিহতের বাবা সায়েদ আলী।
শনিবার
হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে সায়েদ আলীকে
হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সায়েদ আলী নিজেই অকপটে স্বীকার করে
নিয়েছেন মেয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। হত্যার রাতে নিজেই নানাবাড়ি থেকে
বিউটিকে নিয়ে এসেছিলেন।
জবানবন্দিতে
কী বলা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে
পুলিশ। তবে মেয়েকে হত্যার কথা সায়েদ আলী স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন
হবিগঞ্জ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা।
শনিবার
সকাল থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী তৌহিদুল ইসলামের আদালতে সায়েদ আলীর
জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার
জবানবন্দি রেকর্ড চলছিল। জবানবন্দিতে বিউটি হত্যার আদ্যোপান্ত আদালতে
বর্ণনা করেন তিনি।
একই দিন বিকেলে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা আওয়ামী লীগ নেতা ময়না মিয়ার প্রথম স্ত্রী আছমা আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।
এর
আগে শুক্রবার বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আদালতে বিউটির চাচা ময়না
মিয়া হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক
জবানবন্দি দেন। এছাড়া মুল অভিযুক্ত বাবুল মিয়াও অপহরণ ও ধর্ষণের কথা
স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পাশাপাশি বিউটির নানী ফাতেমা বেগমের জবানবন্দিও
আদালত রেকর্ড করেছেন।
সূত্র
জানায়, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি
আক্তারকে (১৬) গত ২১ জানুয়ারি ধর্ষণ করেন একই গ্রামের ইউপি মেম্বার কলম চান
বিবির ছেলে বাবুল মিয়া। এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন
সায়েদ আলী।
ওই
মামলায় সাক্ষী করা হয় সায়েদ আলীর ঘনিষ্ট আত্মীয় ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পরই
বিউটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে নানারবাড়িতে। ১৬
মার্চ রাতে সেখান থেকে নিখোঁজ হয় বিউটি। পরদিন ১৭ মার্চ গুণিপুর থেকে প্রায়
৪ কিলোমিটার দূরে হাওরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে
আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ।
এ
ঘটনায় ১৮ মার্চ বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া
(৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ
থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে
শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে
গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকেও।
হত্যাকান্ডের
ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে
উত্তাল হয়ে উঠে সারাদেশ। পুলিশও হত্যার মোটিভ উদঘাটনে মরিয়া হয়ে ওঠে।
প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী
কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ
করা হয়। বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।
দ্বিতীয়
দফায় চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি
(তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাঝেই তিনি মোটিভ উদঘাটনে
সক্ষম হন।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।