![]() |
| আপেল মাহমুদের বদলি স্থগিত: স্বস্তিতে পর্যটন খাত, আতঙ্কে অনিয়মকারী চক্র |
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি আপেল মাহমুদকে হেডকোয়ার্টারে বদলির আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করায় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পসংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি ও আনন্দের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে আতঙ্কে পড়েছে পর্যটন খাতে জড়িত কিছু দুর্নীতিবাজ ও অনিয়মকারী চক্র—এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
দায়িত্বশীল প্রশাসনিক সূত্র জানায়, এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে একটি লিখিত প্রজ্ঞাপন (গেজেট) জারি করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তা, চলমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা এবং কক্সবাজারসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। ফলে আপেল মাহমুদ আপাতত কক্সবাজারেই দায়িত্ব পালন করবেন।
কেন বদলি স্থগিত—পেছনের কারণ:
সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় ও সংবেদনশীল পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে হঠাৎ নেতৃত্ব পরিবর্তন হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, পর্যটক সেবা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল। বিশেষ করে পর্যটনের ভরা মৌসুম সামনে রেখে অভিজ্ঞ ও মাঠঘনিষ্ঠ নেতৃত্ব বজায় রাখাকে জরুরি মনে করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
ট্যুরিস্ট পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ও পর্যটন শিল্পের বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
পর্যটন খাতে স্বস্তি ও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া:
বদলি স্থগিতের লিখিত আদেশ প্রকাশের পর কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল মালিক, রিসোর্ট উদ্যোক্তা, ট্যুর অপারেটর, পরিবহন খাতের প্রতিনিধি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তির আবহ তৈরি হয়েছে। তাঁদের মতে, আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম আগের তুলনায় আরও দৃশ্যমান ও কার্যকর হয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যটক হয়রানি কমানো, সৈকত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার, বিদেশি পর্যটকদের সহায়তা এবং অননুমোদিত কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ট্যুরিস্ট পুলিশ বর্তমানে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
একজন ট্যুর অপারেটর বলেন, “এই বদলি কার্যকর হলে চলমান শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটতে পারত। সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ায় আমরা স্বস্তিতে আছি।”
আতঙ্কে অনিয়মকারী ও দুর্নীতিবাজ চক্র:
অন্যদিকে, পর্যটন খাতের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, বদলি স্থগিতের খবরে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়েছে অবৈধ ও অনিয়মে জড়িত কিছু ব্যবসায়ী চক্র। সাম্প্রতিক সময়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কঠোর নজরদারির ফলে অবৈধ গাইড ব্যবসা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পর্যটক হয়রানি, অনুমোদনহীন ট্যুর প্যাকেজ এবং অনৈতিক সুবিধা আদায়ের সুযোগ কমে এসেছে।
একজন পর্যটন সংগঠনের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যেখানে আইনের কঠোর প্রয়োগ হয়, সেখানে অনিয়মকারীদের অস্বস্তি হওয়াই স্বাভাবিক।”
নীতিনির্ধারণী মহলের ইতিবাচক বার্তা:
ট্যুরিস্ট পুলিশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের পর্যটন নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। একই সঙ্গে এটি মাঠপর্যায়ে কার্যকর, অভিজ্ঞ ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব ধরে রাখার একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।
পর্যটন নিরাপত্তায় প্রাতিষ্ঠানিক সংকেত:
বিশ্লেষকদের মতে, লিখিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বদলি স্থগিতের সিদ্ধান্ত কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা, সুশাসন ও পর্যটকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে একটি শক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সংকেত।
পর্যটন শিল্পসংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে পর্যটকদের আস্থা বৃদ্ধি, অনিয়ম দমন এবং কক্সবাজারের পর্যটন ভাবমূর্তি আরও সুদৃঢ় করতে সহায়ক হবে।

