বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোর-পাবনা মহাসড়কের লালপুর কদিমচিলানে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই লেগুনাতে মোট ২২ জন যাত্রী ছিলো। ঘটনাস্থলে মারা যায় ১৩ জন।
হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় একজন। পুলিশ ও স্থানীয়রা গুরুতর আহত একজনকে রাজশাহী ও বাকী ৭ জনকে বড়াইগ্রামের বনপাড়া পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। ভর্তির ২০ মিনিট পরই ওই হাসপাতালে মারা এক শিশু ও পরের দিন সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় দ্ইু জন। আহত যাত্রীরা ভর্তির পর পরই পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতালের মালিক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, তার স্ত্রী ডা. হোসনেআরা বেগমসহ অন্যান্যরা অত্যান্ত দায়িত্বশীল ভাবে আহতদের চিকিৎসা করেন। ডা. সিদ্দিকুরের ব্যক্তিগত তহবিল পক্ষ থেকে গরীব আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং বিনামূল্যে দেয়া হয় খাবারও। হাসপাতালের উন্নত চিকিৎসার ফলে ভর্তিকৃত ৭ জনের মধ্যে পাবনা ঈশ্বরদীর সোমা (১৮), অময় (২), আমিরুল (২৮) ও সারথি (৪৫) দাশুড়িয়ার আলী (৩৫) নাটোর নলডাঙ্গার মুকুল হোসেন (২৪) নামে ৬ জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এবং বাকী একজন উপজেলার রাজাপুর অনার্স কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক গড়মাটির গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪৮) এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে। মাথার স্কার্ব অর্ধেক খুলে যাওয়ায় তার অবস্থা গুরুতর ছিলো এবং সেখানে ২৭ টি সেলাই দিতে হয়েছে। এখন তিনি আশংকামুক্ত এবং অনেকটাই সুস্থতার পথে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা থেকে আসা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য সদস্য বিআরটিএ পরিচালক অপারেশন সিতাংশু শেখর বিশ্বাস, গাজিপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম, বুয়েটের সহযোগি অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সদস্য কাজী মোহাম্মদ সিফান নেওয়াজ, নিরাপদ সড়ক চাই এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম আজাদ হোসেন এবং বৈশাখী টেলিভিশনের হেড অব নিউজ অশোক চৌধুরী হাসপাতালে আহত শিক্ষক হাবিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা তার কাছ থেকে দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায় এবং তার বর্ণনার মধ্য দিয়ে সদস্যরা দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন। হাবিবুর রহমানের মাথায় ২৭ টি সেলাই দেয়া হয়েছে। এসময় তদন্ত কমিটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমানকে দায়িত্বশীল ভূমিকার রাখার জন্য প্রশংসা করেন।
চিকিৎসাধীন শরীরচর্চা শিক্ষক হাবিবুর রহমান আবেগ আপ্লুত হয়ে জানান, ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি তিনি একজন চিকিৎসক ও বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি একজন চিকিৎসক হিসেবে আহতদের যেভাবে নিজ হাতে চিকিৎসা দিলেন তাতে তিনি অভিভূত। তিনি ও তার পরিবার বারবার ডা. সিদ্দিকুর রহমানের কথা স্মরণ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে তার দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। এদিকে ডা. সিদ্দিকুর রহমানের আহতের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ সহ বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ ভূয়সী প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা পোষণ করেন। অনেকেই তার এই নিবেদিত জীবনের সফলতা কামনা করে মোবাইল ও ফেসবুকে বার্তা প্রেরণ করেন।
ডা. সিদ্দিকুর এ বিষয়ে জানান, জনগণের সেবার প্রতি দায়িত্ববোধ আমার ছোট বেলা থেকে। যার কারণে আমি নিজেই একটি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি। তিনি জানান, ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হয়, ২১ আগষ্ট তার কণ্যাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয় এবং সেখানে অনেকে শহীদ হন। এই শোকের মাসে ২৫ আগষ্ট স্থানীয় পর্যায়ে সড়ক দুর্ঘটনায় এতো লোকের প্রাণহানি আমাদেরকে আরও শোকে কাতর করে দিয়েছে। এই শোককে শক্তিরূপে গ্রহণ করে যতদিন বেঁচে থাকবো মানুষের সেবায় ব্রত থাকবো বলে তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।