অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন শতবর্ষী সেই রাবেয়া - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, নভেম্বর ০২, ২০১৯

অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন শতবর্ষী সেই রাবেয়া

সময় সংবাদ ডেস্ক//
বছরের পর বছর আদালতে ঘুরপাক করা শতবর্ষী রাবেয়া খাতুন অবশেষে অস্ত্র মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন।

বুধবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে অস্ত্র মামলা থেকে খালাস দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন অর রশীদ।

২০০২ সালের তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়েছিল। এরপর থেকে বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয়েছে বয়সের ভারে ন্যুজ এই নারীকে।


রাবেয়ার আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল জানান, ২০০২ সালে তার নামে এজাহার হয় এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি জজকোর্টে চলছিল, নিষ্পত্তি হচ্ছিল না। ওই বৃদ্ধার ভাষ্যমতে তার বয়স ১০৪ বছর। এটা পত্রিকায় দেখে হাইকোর্টে আবেদন করি। আদালত ২৯ এপ্রিল রুল জারি করেন এবং মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। গত ১৫ অক্টোবর মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি হয়। আদালত রায়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রাবেয়া খাতুনের ক্ষেত্রে মামলাটি কোয়াশড (বাতিল) করেছেন। অর্থাৎ রাবেয়া খাতুন এই মামলায় আর কোর্টে যেতে হবে না।

২০ আগস্ট এ মামলায় ক্ষমা চেয়েছিলেন ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি)। শুনানিতে পুলিশ সুপার তার লিখিত বক্তব্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার পাশাপাশি আদালতকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ভুল হবে না। পরে আদালত ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করেন।

অবৈধ অস্ত্র ও গুলিসহ তেজগাঁও থানার গার্ডেন রোডের একটি বাসা থেকে রাবেয়া খাতুনকে ২০০২ সালের ২ জুন গ্রেফতার করে পুলিশ। সেদিনই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় জুলহাস ও অপর এক ব্যক্তি মাসুদকে আসামি করা হয়। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়। এর প্রায় ছয়মাস পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।

একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাবেয়া খাতুন ও জুলহাসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তবে ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর এ মামলায় ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। মামলার বিচার দীর্ঘ ১৬ বছরেও সম্পন্ন না হওয়ায় এ নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘অশীতিপর রাবেয়া: আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আশরাফুল আলম নোবেল।

গত ৩ জুলাই এক অস্ত্রমামলার আসামি জুলহাস বেঁচে আছেন কিনা সে বিষয়ে পুলিশের কাছে প্রতিবেদন আকারে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়, জুলহাস ১০ থেকে ১২ বছর আগে পরিবার নিয়ে ভোলায় চলে গেছেন। অন্যদিকে ভোলার পুলিশ সুপারের দাখিল করা প্রতিবেদন বলছে, ভোলায় জুলহাস নামে কোনো ব্যাক্তি নেই এবং তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এরপর রাবেয়ার আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল আদালতকে বলেন, ২০০৪ সালের ১ নভেম্বর ফার্মগেইটের তেস্তুরি বাজারে জুলহাসকে দুষ্কৃতিকারীরা হত্যা করে। এ ঘটনায় তার মা নুরজাহান বেগম বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেন। কিন্তু এরপরও পুলিশের পরষ্পর বিরোধী প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

পরে আদালত জুলহাস জীবিত নাকি মৃত সে বিষয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় ভোলার পুলিশ সুপারকে গত ১৭ জুলাই তলবের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘অশীতিপর রাবেয়া: আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বৃদ্ধার বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দেই। মামলা শেষ হয় না। কবে শেষ হবে, তাও জানি না। পুলিশরে শরবত, মোরাব্বা বানাই খাওয়াছি। তারপরেও মামলায় আমারে আসামি বানাইছে। আমি আর বাঁচতে চাই না। মরতে চাই। অনেকদিন ধরে এই মামলায় হাজিরা দেই। আদালত আমাকে মামলা থেকে খালাসও দেয় না, শাস্তিও দেয় না।’

পরে ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত বিচারিক আদালতে থাকা মামলার কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেন এবং মামলার অগ্রগতি নিয়ে শুনানি চলমান রাখেন।

Post Top Ad

Responsive Ads Here