জেলা প্রতিনিধিঃ
খুলনার কয়রা উপজেলার বামিয়া গ্রামে মা-বাবা ও মেয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্বজনরা শোকে মূহ্যমান। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। তবে প্রতিবেশী এক গৃহবধূর পরকীয়া নিয়ে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়েছিল। সেই ঘটনার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে বলে ধারণা স্বজনদের।
বামিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবুল্লাহ, তার স্ত্রী বিউটি খাতুন ও মেয়ে হাবিবুন্নাহার টুনির লাশ পুকুর থেকে উদ্ধারের পর থেকে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ঘটনার কারণ খুঁজতে হন্যে হয়ে ছুঁটছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিআইডি, ডিবি পুলিশ, পিবিআই, র্যাবের একাধিক টিম এ খুনের নেপথ্য কারণ ও খুনিদের গ্রেফতারে কাজ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্লু বের করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার রাতের কোনো একসময় তাদের হত্যার পর লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাবিবুল্লাহ ও টুনির মাথায়, মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাবিবুল্লাহর হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। তবে বিউটি খাতুনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই দিন সকালে পুকুরে পানি আনতে গিয়ে এক নারী লাশগুলো দেখতে পান। পানিতে হাবিবুল্লাহ খালি গায়ে লুঙ্গি পরা উপুড় অবস্থায়, তার স্ত্রীর পরনে ব্লাউজ, পেটিকোট আর মেয়ের গায়ে সালোয়ার-কামিজ ছিল। তাদের ঘর থেকে মাত্র ১০-১২ ফুট দূরে পুকুরঘাট। ওই বাড়িতে তারা তিনজনই থাকতেন।
পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যার পর লাশ গুম করতে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, রাতে প্রতিবেশীরা কোনো ধরনের চিৎকার বা শব্দ শুনতে পাননি। ঘরের মালামালও উলোটপালোট করা ছিল না। নিহত হাবিবুরের প্রতিবেশী কুদ্দুস গাজীর স্ত্রী সুলতানার সঙ্গে এলাকার একাধিক যুবকের পরকীয়ার বিষয় জানার পর হাবিবুর প্রতিবাদ করে এবং লোকজনকে জানায়। ৩/৪ মাস আগে হাবিবুর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরার সময় মুখোশধারী কিছু যুবক তাকে মারধর করে এবং একই সময় গৃহবধু সুলতানা বেগম বটি দিয়ে হাবিবুরের পিঠে কোপ মারে। অতঃপর গ্রাম্য শালিশে বিষয়টি মীমাংসা হয়। পরকীয়ার সঙ্গে জড়িতরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
নিহতের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, পূর্ব পরিচিত কেউ হয়তো তাদের হত্যা করেছে। পুকুরের পশ্চিম পাশে ঘাটের কাছে লাশ পাওয়া যায়। কীভাবে কী হলো বুঝে উঠতে পারছি না। ঘরের দরজা খোলা ছিল। কোথাও রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি।
ভাইয়ের কোন শত্রু ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কোনো শত্রু ছিল না। তবে তার একটি ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল। ৩-৪ মাস আগে কুদ্দুস গাজীর স্ত্রী সুলতানার পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে ওদের সাথে হাবিবুরের একটি বিরোধ হয়। ওরা তাকে মারধর ও কুপিয়ে আহত করে। এছাড়া আর তেমন কোনো শত্রু তো দেখছি না।
কয়রা থানার ওসি মো. রবিউল হোসেন বলেন, নিহত হাবিবুর রহমানের মা কোহিনুর খানম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছেন। হত্যাকাণ্ড কী কারণে সংঘটিত হয়েছে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা তার রহস্য উৎঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশ হেফজতে রাখা হয়েছে।
খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। হত্যার রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা চলছে। যা কিছু জানা গেছে তা এখনি বলা ঠিক হবে না। শেষ পর্যন্ত গিয়ে আমরা প্রকাশ করবো। লাশগুলোর ময়নাতদন্ত চলছে।