বড় বোনকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরালেন ছোটবোন মিরা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, অক্টোবর ১২, ২০২১

বড় বোনকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরালেন ছোটবোন মিরা



ওবায়দুর ইসলাম রবি,রাজশাহী প্রতিনিধিঃ


কাজী মিরা (৬০) ও কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস (৫০) দুই বোন। বসবাস করেন রাজশাহী মহানগরীর হাদিরমোড় এলাকায়। তাদের বাড়িতে পুরুষ অভিভাবক বলতে কেউ নেই। করোনা মহামারি মাঝে গত জুন মাসে হঠাৎ বড় বোন কাজী মিরার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সে সময় চারদিকে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। ছোটবোন কাজী জান্নাতুলের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। কোথায় পাবে অক্সিজেন, কীভাবে বাঁচবে বড়বোন! এই দুুঃশ্চিন্তায় জান্নাতুন যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা বড়বোনের বাঁচার আশা জাগিয়ে তোলে মিরাকে। 


রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও আরএমপির হটলাইনে হটলাইনে কল করে বিনামূল্যে একের পর এক অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বড়বোনকে বাঁচিয়ে রাখেন কাজী জান্নাতুল। প্রতি ২০ থেকে ২৫ মিনিটে একটি করে সিলিন্ডার প্রয়োজন হয় কাজী মিরার। এভাবে দীর্ঘ চার মাস সংগ্রাম করে বড়বোনকে মৃত্যুর কোল থেকে ফিরিয়ে আনেন ছোটবোন। বড়বোন এখন অনেকটায় সুস্থ্য, নিজে শ্বাস নিতে পারছেন। যাদের সহযোগিতায় ও পদক্ষেপের কারণে বড়বোনকে বাঁচাতে পেরেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলে যাননি কাজী জান্নাতুল। সোমবার দুপুরে নগর ভবনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে ছুটে এসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। জানালেন, আরএমপি কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক ও সহযোগিতা প্রদানকারী চিকিৎসকদের কাছে গিয়েও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন।



এ ব্যাপারে কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ২১জুন দিবাগত রাত ১২টায় আমার বোনের হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, কোন বেড খালি নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে সেদিন বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি এবং আরএমপি‘র হটলাইনে কল করে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নেয়। পরদিন ২২জুন বড়বোনকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করি। তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে পুনরায় ১১ জুলাই তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। কিন্তু বাড়িতে ফিরে রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়। ১১ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও আরএমপি থেকে মোট প্রায় ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বড়বোনকে বাঁচিয়ে রাখি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও আরএমপি‘র হটলাইন মধ্যরাতে বা যখনই কল করেছি, তখন তারা বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌছে দিয়েছে। কখন বিরক্ত হয়নি। যতবার চেয়েছি, ততবারই আমার ডাকে সাড়া দিয়েছে।


কাজী জান্নাতুল রাসিক মেয়র ও আরএমপি কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বলেন, জন্ম ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তবে মাননীয় মেয়র মহোদয় ও আরএমপি কমিশনার মহোদয়ের এই অক্সিজেন সুবিধা না পেলে আমার বড় বোনকে বাঁচিয়ে রাখতো সম্ভব ছিল না। মেয়র মহোদয় ও আরএমপি কমিশনার মহোদয় বিনামুল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করে এভাবে যে কতো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন, তাঁরা হয়তো তা জানেনই না। আমি যদি আজ না জানাতাম, আমার এই ঘটনাটিও তাঁরা জানতেন না। যেসব পরিবার উপকৃত হয়েছেন, তারাই জানেন, কতটা উপকার তারা পেয়েছেন। কারণ সে সময় দ্বিগুন/তিনগুন দামেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল না অক্সিজেন সিলিন্ডার। শুধু কাজী মিরা নয়, এই রকম আরো অনেক পরিবারের এমন গল্প আছে। মহামারি করোনকালে মহানগরবাসীর দুঃসময়ে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। দফায় দফায় খাদ্য, নগদ অর্থ, বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা সহ বিভিন্ন মানবিক সেবা নিয়ে হাজির হয়েছেন মেয়র লিটন। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে মানুষকে অব্যাহতভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন সিটি মেয়র।

Post Top Ad

Responsive Ads Here