ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর অবৈধ্য নির্মাণাধীন দুই ভবন ধ্বংসের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। ভবন দুইটি ধ্বংস করার নেতৃত্ব দিচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন।
শনিবার সকালে ওই অবৈধ ভবন গুলো ভাঙা শুরু করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এটা উচ্ছেদের নির্দেশনা পাওয়া গেছে। যার কারনে মেয়রকে ৩০ দিন আগে উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তবে তার পক্ষ থেকে কোস ধরনের কার্যক্রম পাওয়া যায়নি। ইতর্পূবে গত ১০ অক্টোবর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জরুরি পদক্ষেপের জন্য চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর পত্রিকার সংবাদ প্রকাশের পর থেকে বিষয়টি তদন্ত করে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। চিঠি দেওয়ার প্রায় ০২ মাস পর ভবনটি ভাঙা শুরু করল প্রশাসন। জলাবদ্ধতা নিরসনে বছরখানেক আগে কাটাখালী পৌরসভার ওপর দিয়ে যাওয়া খালটি ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পুনঃখনন করে। গত এপ্রিলের দিকে কাটাখালীর মেয়র সরকারি এই খালের ওপর ভবন নির্মাণ শুরু করেন। ১৯ জুলাই একতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করা হয়। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে সরকারি খালের ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে খালের ওপর প্রায় ১ হাজার ১৪৪ বর্গফুট জায়গাজুড়ে একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এখানে ইতমধ্যে ০২ তলা ভবন উঠে গেছে। অন্যদিকে ব্রিজের উত্তর পাশে খালের ওপর আরেকটি ভবনের দুইতলা উঠে গেছে। এই ভবনে দোকান হবে মোট ০৬টি।
উপঢৌকন হিসাবে কাটাখালী পৌরসভা থেকে গত বছর ৩ মে ৫৪ হাজার ২৫০ টাকা উত্তোলন করা হয়। এই টাকা খরচের খাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ঢাকায় আম পাঠানো’। ৬ জুন ঢাকায় লিচু পাঠানোর জন্য পৌরসভার তহবিল থেকে তোলা হয় ১ লাখ ২০ হাজার ৩৫০ টাকা। কাটাখালী পৌর মেয়র আব্বাস আলী এমন নানা খাতে পৌরসভার টাকা ব্যয় করেছেন। মেয়রের ব্যক্তিগত চেম্বারের সিসিটিভি ক্যামেরা মেরামত বাবদ ৩৩ হাজার ৩৩৮ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে পৌরসভার তহবিল থেকেই। ১৯ এপ্রিল একটি হোটেলের আপ্যায়ন বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৭৯ হাজার ৩১০ টাকা। একই তারিখে একই হোটেলের আপ্যায়ন বিল ২৭ হাজার ১৩০ টাকা। ১৫ এপ্রিল ‘ফুটবল খেলার খবর দেখানো’ বাবদ তোলা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৩২৪ টাকা। ঈদে ত্রাণ কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই টাকা তোলা হয়েছে গত ১৫ এপ্রিল। একই তারিখে চাল-ডাল কেনার খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। ৮ এপ্রিল অটোচালকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৪১১ টাকা। পৌরসভার অতিথি আপ্যায়নের নামে সব বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছ ‘একতা হোটেল’ নামের একটি খাবারের হোটেলের নামে। কাটাখালী বাজারের এই হোটেলের মালিক মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী এবং তাঁর ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম। তাঁরা মেয়র আব্বাসের চাচাতো ভাই। অস্বাভাবিক বিলগুলো এসেছে ‘মমতাজ লাইব্রেরি অ্যান্ড স্টেশনারি’ নামের একটি দোকানের নামে। এই দোকানের মালিক জাহিদ-উল-হাসান জুয়েল। তিনি মেয়রের খালাতো ভাই। পৌরসভার সব মনোহারিসামগ্রী কেনা হয়েছে এই দোকান থেকেই। পৌরসভার হিসাবের খাতায় একতা হোটেল ও মমতাজ স্টেশনারির বিলের ছড়াছড়ি দেখা গেছে।
পৌরসভার কাউন্সিলর মনজুর রহমান বলেন, ভুয়া বিল তৈরিতে আরও প্রতিষ্ঠানের নাম আছে। এসকল বিষয়ে তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে। ভুয়া বিল দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মমতাজ স্টেশনারির মালিক এবং মেয়রের খালাতো ভাই জাহিদ-উল-হাসান। তবে বিভিন্ন পণ্যের বেশি দাম ধরার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেননি। প্রসঙ্গত, পৌরসভার হিসাবরক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী বিল এনে দাখিল করলে তা পরিশোধ করতেই হতো। মেয়রের নির্দেশেই সব বিল দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।