রাজবাড়ীতে এসআই এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার এজাহার পরিবর্তনের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজবাড়ীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ধর্ষণ মামলার এজাহার পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর দাবি, এসআই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি পক্ষের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এজাহারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবর্তন করেছেন। এর ফলেই আসামি জামিন পেয়েছে।
মামলার বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আবু বক্কার শেখের ছেলে সাদ্দাম (১৯) দীর্ঘদিন ধরে তাকে অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ ও অনৈতিক প্রস্তাব দিত। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ১২ জুলাই রাত আনুমানিক ১টা ২০ মিনিটে বাদী প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে আসামি কৌশলে তার ঘরে ঢুকে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে।
ভুক্তভোগী ঘরে প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করা মাত্রই আসামি ধারালো চাকু গলায় ধরে হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধস্তাধস্তির সময় চাকুর আঘাতে তার ডান হাতের বৃদ্ধ আঙুল কেটে যায়। তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে আসামি পালানোর চেষ্টা করে। পরে এলাকাবাসী তাকে আটক করে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদে বেঁধে রাখে।
পরিবারের সহায়তায় ভুক্তভোগীকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
এসময় ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী দাবি করেন, থানায় জমা দেওয়া আসল এজাহারে কোথাও আপোষ-মীমাংসার কথা উল্লেখ ছিল না। কিন্তু অন্য একটি কপিতে দেখা যায় স্থানীয়ভাবে আপোষের চেষ্টা হয়েছিল বলে লেখা আছে। এই পরিবর্তিত এজাহারের ভিত্তিতেই আদালত আসামিকে জামিন দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, “আমি ডায়াবেটিস রোগী। ঘটনার পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থানায় গেলে আমাকে একা একটি রুমে রাখা হয়। আত্মীয়-স্বজনকে পাশে থাকতে দেওয়া হয়নি। বিকেলে এসআই এনায়েত এসে বলেন আগের এজাহারে ভুল আছে, নতুন এজাহারে স্বাক্ষর করতে হবে। সরল মনে আমি স্বাক্ষর করি। পরে বুঝতে পারি আমার এজাহার পরিবর্তন করা হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এক মাসের মধ্যে আসামি জামিন পেয়ে বের হয়ে এসেছে। আমি এখন ভয়ে আছি। যদি আমার ক্ষতি করে! আমি ন্যায়বিচার চাই এবং এসআই এনায়েতকে এই মামলার তদন্ত থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানাই।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী বিজন কুমার বোস বলেন, “১৪ আগস্ট শুনানির সময় দেখি দুটি এজাহারের কপি আছে। আসামি পক্ষের কপিতে আপোষের কথা লেখা থাকায় বিচারক সেটিকে ভিত্তি করে আসামিকে জামিন দিয়েছেন।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরদুর রাজ্জাক জানান,“শুনানির সময় আমি জামিনের বিরোধিতা করেছি। কিন্তু আপোষের বিষয় উল্লেখ থাকায় আসামি জামিন পেয়ে যায়।”
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এনায়েত হোসেন বলেন, “এজাহারের কপিতে ভুল ছিল। আমি সেটি সংশোধন করে ওসি সাহেবকে দিয়েছি। তিনি মামলা রেকর্ড করেছেন।”
রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন,“এসআই যে এজাহার দিয়েছেন, সেটিই রেকর্ড করেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। বাদীর যদি কোনো আপত্তি থাকে তাহলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।”