পাহাড়ে ধর্ষণ ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর অভিযোগে পিসিসিপির তীব্র প্রতিবাদ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৫

পাহাড়ে ধর্ষণ ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর অভিযোগে পিসিসিপির তীব্র প্রতিবাদ

 

পাহাড়ে ধর্ষণ ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর অভিযোগে পিসিসিপির তীব্র প্রতিবাদ
পাহাড়ে ধর্ষণ ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর অভিযোগে পিসিসিপির তীব্র প্রতিবাদ

মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:

ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল সামাজিক ইস্যুকে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)। 


বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজম এই প্রতিবাদ জানান।


বিবৃতিতে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ বলেন, “বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বহু-জাতিগোষ্ঠীর আবাসভূমি—এখানে বাঙালি ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি বসবাস করছে। এই মিশ্র সমাজে অপরাধ ঘটবে, এটি সামাজিক বাস্তবতা। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, যখন কোনো অপরাধ উপজাতি নারী ও বাঙালি পুরুষকে ঘিরে ঘটে, তখন ঘটনাটি বিচার বা প্রমাণের আগেই জাতিগত উত্তেজনা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করা হয়।”


পিসিসিপি নেতারা তাদের বিবৃতিতে পাঁচটি মূল দিক তুলে ধরেন—


🔹 ১. অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়ার বৈষম্য:

তারা বলেন, ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ—যার কোনো জাতি, ধর্ম বা গোষ্ঠী নেই। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যায়, যখন কোনো উপজাতি নারী কোনো বাঙালি পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, তখন কিছু উপজাতি রাজনৈতিক সংগঠন (যেমন: জেএসএস, ইউপিডিএফ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, জুম্ম ছাত্র জনতা) তাৎক্ষণিকভাবে রাজপথে নামে। এছাড়াও কিছু ব্যক্তি যেমন ইয়েন ইয়েন, মাইকেল চাকমা, পল্বব চাকমা, ডা. মংসানু মারমা, দেবাশীষ রায়সহ আরও কয়েকজন সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।


ঘটনার তদন্ত বা প্রমাণের আগেই “জাতিগত নিপীড়ন”, “উপজাতি নারী নির্যাতন”, “বাঙালি কর্তৃক দমননীতি” বা “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” ইত্যাদি স্লোগানে প্রচারণা চালানো হয়। এমনকি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছেও বিষয়টি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে, যখন কোনো উপজাতি নারী নিজ উপজাতি পুরুষের হাতে ধর্ষিত হন, তখন এসব সংগঠন নীরব থাকে—কোনো প্রতিবাদ বা মানববন্ধন হয় না। স্থানীয়ভাবে অনেক সময় “প্রথাগত নিয়মে” অর্থ ও শুকর জরিমানার মাধ্যমে মীমাংসা করে ফেলা হয়, ফলে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি হয় না এবং ভুক্তভোগী নারী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।


🔹 ২. তথ্য ও বাস্তবতা:

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের প্রায় অর্ধেক ঘটনাই উপজাতি সমাজের অভ্যন্তরে সংঘটিত। কিন্তু এর সামান্য অংশই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। বহু ক্ষেত্রে পরিবার বা গোষ্ঠীপ্রধানরা “প্রথাগত বিচার”-এর নামে মামলা করতে বাধা দেন। এমনকি কিছু মানবাধিকার সংগঠনও বাছাই করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে—উপজাতি বনাম উপজাতি ঘটনার প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে না।


🔹 ৩. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও জাতিগত বিভাজন:

বিবৃতিতে বলা হয়, এই ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার মূল কারণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। চরমপন্থী উপজাতি সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামকে “জাতিগত নির্যাতনের অঞ্চল” হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়, যাতে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পাওয়া যায় এবং স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে জোরদার করা যায়। উপজাতি বনাম উপজাতি ঘটনার মাধ্যমে এমন প্রচারণা সম্ভব না হওয়ায় তারা বাঙালি অভিযুক্ত থাকলেই ইস্যুটি বড় করে তুলে ধরে। অনেক সময় বাঙালিদের নামেও মিথ্যা অভিযোগ তুলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।


🔹 ৪. আইনি ও নৈতিক দিক:

বাংলাদেশের সংবিধান ও দণ্ডবিধি অনুসারে, ধর্ষণ একটি জাতিহীন অপরাধ। অপরাধী ও ভুক্তভোগীর জাতিগত পরিচয় নয়—আইনি প্রমাণই মুখ্য। কিন্তু পাহাড়ে কিছু সংগঠন আইনকে পাশ কাটিয়ে জনতার বিচারের নামে মব গঠন করে সহিংসতা চালায়, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড।


🔹 ৫. সমাধানের প্রস্তাব:

এক. প্রত্যেক ধর্ষণ মামলা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

দুই. অপরাধকে জাতিগত বা রাজনৈতিক ইস্যু বানানো বন্ধ করতে হবে।

তিন. গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সব ঘটনার ন্যায়সংগত প্রতিবেদন দিতে হবে।

চার. প্রশাসনিক নজরদারি ও রাষ্ট্রীয় উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পান।


বিবৃতিতে পিসিসিপি নেতারা সাম্প্রতিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “কদিন আগে খাগড়াছড়িতে মিথ্যা ধর্ষণ ইস্যুতে সহিংসতা ছড়িয়ে সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা করা হলেও, রাঙামাটির কাপ্তাই ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সাম্প্রতিক দুটি গণধর্ষণের ঘটনায় পাহাড়ের তথাকথিত আন্দোলনকারী ও অধিকারকর্মীরা চুপ। এখন প্রশ্ন—এই দুই ঘটনায় কি কোনো প্রতিবাদ হবে না?”


তারা আরও বলেন, “ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল বিষয়কে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে পরিণত করে পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃত অর্থে ধর্ষণের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অবস্থান নেই। বরং প্রতিবাদের নামে সহিংসতা ছড়িয়ে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।”


পিসিসিপি নেতারা দাবি করেন, সম্প্রতি কাপ্তাইয়ে এক প্রতিবন্ধী মারমা কিশোরীকে তিন মারমা যুবক ধর্ষণ করে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা করেছে এবং ২০ অক্টোবর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক উপজাতি নারী মন্দিরে গেলে চার ত্রিপুরা যুবক তাকে গণধর্ষণ করে। কিন্তু এসব ঘটনায় যারা আগে “ধর্ষণবিরোধী” আন্দোলনে গলা ফাটাতেন, এখন তারা নীরব।


সংগঠনটির নেতারা বলেন, “ধর্ষণ একটি সামাজিক অপরাধ, কোনো জাতিগত সংঘাত নয়। বাঙালি অপরাধী হলে যেমন বিচার চাই, উপজাতি অপরাধী হলেও একইভাবে বিচার চাই—এটাই ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই নৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, যার সুযোগ নিচ্ছে পাহাড়ের কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক গোষ্ঠী। এখন সময় এসেছে—‘ধর্ষণ নয়, অপরাধীর বিচার’—এই নীতি মেনে চলার।”


📊 তথ্যসূত্র:

দৈনিক জনকণ্ঠ (২০২২), বাংলাদেশ প্রতিদিন (২০২১), এবং মানবাধিকার কমিশনের আঞ্চলিক প্রতিবেদন (২০১৯)। এসব সূত্রে উল্লেখ আছে, ২০১৫–২০২১ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্তত ৩৫টির বেশি উপজাতি-উপজাতি ধর্ষণের ঘটনা স্থানীয় পর্যায়ে “মীমাংসা” করা হয়, যা আদালত পর্যন্ত যায়নি।



Post Top Ad

Responsive Ads Here