জমাদিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী:
আরবি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস ‘জমাদিউল আউয়াল’। এটি হিজরি সনের একটি মর্যাদাপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মাস। এর পরের মাস ‘জমাদিউস সানি’—এই দুটি মাসকে একত্রে বলা হয় ‘প্রথম ও দ্বিতীয় শীতকাল’।
‘জমাদা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ স্থির, কঠিন, জমাট বা শীতল। কারণ, আরব অঞ্চলে এ সময় প্রকৃতিতে শীতের প্রভাব প্রবল থাকে, জল বরফে পরিণত হয় এবং প্রকৃতি নীরব হয়ে পড়ে। তাই এ মাসের নাম রাখা হয়েছে জমাদিউল আউয়াল।
প্রকৃতির নিদর্শন ও আল্লাহর কুদরত:
আল্লাহ তাআলা বলেন— “তুমি পর্বতমালা দেখছ, মনে করছ তা স্থির; অথচ তারা মেঘের ন্যায় সঞ্চারমান। এটি আল্লাহরই সৃষ্টি নৈপুণ্য।” (সূরা আন-নামল, আয়াত ৮৮)
অন্য আয়াতে বলেন— “কুরাইশদের অনুরাগ রয়েছে শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তাদের উচিত এ গৃহের রবের ইবাদত করা, যিনি ক্ষুধায় অন্ন দান করেন ও শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেন।” (সূরা আল-কুরাইশ, আয়াত ১–৪)
মাসটির তাৎপর্য ও শিক্ষণীয় দিক:
জমাদিউল আউয়াল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—প্রকৃতির পরিবর্তন আল্লাহর কুদরতেরই প্রকাশ। মানুষের জীবনেও সময়ের প্রতিটি ধাপ এক একটি শিক্ষা। তাই এই মাসের বার্তা হলো—সময়কে নেক আমলে পূর্ণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলা।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন— “জমাদা হলো আরবের শীতকাল; এটি বসন্তের নিকটবর্তী ও গ্রীষ্মের পূর্বকালীন সময়।”
নেক আমল ও করণীয়:
এই মাসে বিশেষ কোনো ফরজ আমল নির্ধারিত না থাকলেও নেক আমলের মাধ্যমে এটি বরকতময় হয়ে ওঠে। যেমন—
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত ও আউয়াবিন নামাজ আদায়।
সোমবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নফল রোজা রাখা।
চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ‘আইয়ামে বিদ’ রোজা পালন।
সদকা, খয়রাত ও দান করা।
কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, দরুদ ও ইস্তেগফার অধিক পরিমাণে পাঠ করা।
সময়ের মূল্য ও ফজিলত:
নেক আমল ছাড়া অতিবাহিত প্রতিটি মুহূর্তের জন্য মানুষ পরকালে আফসোস করবে। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন—
“পরকালে জান্নাতবাসীদের একমাত্র আফসোস থাকবে সেই সময়ের জন্য, যে সময় তারা নেক আমল ছাড়া কাটিয়েছে।” (তিরমিজি)
তাই জমাদিউল আউয়াল মাসের শিক্ষা হলো—সময়কে অপচয় না করে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যয় করা।
দোয়া:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদের সবাইকে এই মাসের ফজিলত ও বার্তা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করেন। আমীন।
লেখক:
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী
ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট
সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট।