ফজরের পর ঘুম: ইসলামি নির্দেশনা ও অতিরিক্ত ঘুমের ক্ষতিকর দিক - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৫

ফজরের পর ঘুম: ইসলামি নির্দেশনা ও অতিরিক্ত ঘুমের ক্ষতিকর দিক

 

ফজরের পর ঘুম: ইসলামি নির্দেশনা ও অতিরিক্ত ঘুমের ক্ষতিকর দিক
ফজরের পর ঘুম: ইসলামি নির্দেশনা ও অতিরিক্ত ঘুমের ক্ষতিকর দিক

সময় ডেস্ক:

ইসলামে সময়ের সঠিক ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম হিসেবে ঘুম আল্লাহর এক মহামূল্যবান নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম এবং রাতকে করেছি আবরণ।” (সুরা নাবা ৯-১০)। এই আয়াত মানুষের জীবনে ঘুমের গুরুত্ব এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৬–৭ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। ইসলামও কাজ, ইবাদত ও বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিত ঘুম ও সময় ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়। তবে ভোরের সময়, বিশেষ করে ফজরের নামাজের পর ঘুমানো ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে। কারণ এ সময়কে বরকত ও কর্মোদ্যমের সময় হিসেবে গণ্য করা হয়।


হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করেছেন—“হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য সকালে বরকত দান করুন।” (তিরমিজি ১২১২)।এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়, যে ব্যক্তি ফজরের পর কাজে মনোনিবেশ করে, সে জীবনে অধিক বরকত লাভ করে। বিপরীতে, অতিরিক্ত ঘুম বা অলসতা বরকতের সুযোগ নষ্ট করে।


বর্তমান সময়ের বহু মানুষ রাত জেগে বিনোদন, মোবাইল বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করেন। ফলে ফজরের নামাজ আদায় ব্যাহত হয় এবং ভোরের শান্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হন। এতে মানসিক চাপ, ক্লান্তি ও আত্মিক প্রশান্তির অভাব দেখা দেয়।


ফজরের পর ঘুম নয়—বরং আমল:

রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজের পর জিকির, দোয়া, তসবিহ, তাহলিল, কোরআন তিলাওয়াত ও ইশরাক নামাজ আদায়ের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে—

“যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, এরপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে এবং দুই রাকাত ইশরাক আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও ওমরাহর পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।” (তিরমিজি ৫৮৬)


এ সময় আল্লাহর স্মরণে কাটানো ব্যক্তিকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণময় ফয়সালা প্রদান করা হয়।


রাতের প্রথম ভাগে ঘুমানোর উপকারিতা:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,“রাতের প্রথম ভাগে ঘুমাও এবং শেষ ভাগে ইবাদতের জন্য জেগে ওঠো।” (সহিহ বুখারি ১১২০) অর্থাৎ, রাত জাগার বদলে তাড়াতাড়ি ঘুমানোই সুন্নত এবং শরীর–মন উভয়ের জন্য উপকারী। ইতিহাসেও দেখা যায়, সফল ও আলোকিত ব্যক্তিরা ভোরবেলা জেগে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতেন।


আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন— “যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় বিছানায় যায় এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করে, সে যখন পার্শ্ব পরিবর্তন করে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করার সুযোগ দেন।” (তিরমিজি ৩৫২৬)


অতিরিক্ত ঘুমের ক্ষতি:

অতিরিক্ত ঘুম শরীরে অলসতা তৈরি করে, মনকে ক্লান্ত করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। এমনকি হাদিসে এসেছে— “যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম স্মরণ না করে রাতে ঘুমায় এবং ফজরের সময় না জাগে, তার কানে শয়তান গিঁট বেঁধে দেয়।” (সহিহ বুখারি ১১৪২)


এর অর্থ—রাতভর বিনোদন বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করে ফজরের সময় ঘুমিয়ে থাকা মানুষের জীবনে বরকত নেমে আসে না।


ফজরের পর ঘুম শরীর–মনের উপকারিতা কমিয়ে দেয় এবং ইসলামের নির্দেশনার বিপরীত। বরং ভোরবেলা ইবাদত, মনোযোগ, কর্মোদ্যম ও আল্লাহর বরকত লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। ইসলামি আদর্শ ও আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের আলোকে—ফজরের পর নতুন দিনের কাজ শুরু করাই কল্যাণ ও সফলতার পথ।


লেখক:হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট

সাবেক ইমাম ও খতীব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট


Post Top Ad

Responsive Ads Here