![]() |
| লক্ষ্মীপুরে ১,৫০০ টাকায় মিলছে এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন |
মো. নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকায় মিলছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্মনিবন্ধন সনদ। উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট বাজারে দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি চক্র গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই চক্রের মূলহোতা ফজুমিয়ারহাট বাজারের কম্পিউটার ব্যবসায়ী মো. জহির উদ্দীন।
জানা যায়, জহির উদ্দীন চরকাদিরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং পেশায় স্থানীয় একটি কম্পিউটার দোকানের মালিক। তার বিরুদ্ধে এনআইডি কার্ড জালিয়াতি, বয়স পরিবর্তন, ও ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জহির ও তার সহযোগীরা মাত্র ১ হাজার থেকে ১,৫০০ টাকার বিনিময়ে নকল এনআইডি কার্ড, জন্মনিবন্ধন সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে দেয়। এই জাল নথিগুলো ব্যবহার হচ্ছে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি, জমি দখল, ভাতা উত্তোলন ও বিদেশগমনের কাজে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল ওয়াদুদ বলেন, “ভুয়া এনআইডি প্রদান করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই চক্র নাম ও ছবি ঠিক রেখে অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে নকল কার্ড তৈরি করছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
চরকাদিরার বাসিন্দা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “আমি ১,৫০০ টাকা দিয়ে জহিরের দোকান থেকে এনআইডি কার্ড করিয়েছিলাম। পরে বিষয়টি ধরা পড়লে ইউএনও অফিসে ডেকে আমাকে মুচলেকা দিতে হয়, কিন্তু জহিরের কোনো শাস্তি হয়নি।”
অন্য ভুক্তভোগী নয়ন আক্তার বলেন, “আমার এনআইডির ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য জহির ৩৫০ টাকা নিয়ে নতুন আইডি তৈরি করে দেয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে সার্চ দিলে দেখা যায়, তথ্য ভুল।”
অভিযুক্ত মো. জহির উদ্দীন অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, “আমার দোকান থেকে এসব কাজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অন্য কেউ করেছে। আমি সরাসরি জড়িত নই।”
তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, জহিরকে বহুবার সতর্ক করা হলেও তিনি এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করেননি।
চরকাদিরা ইউনিয়নের সচিব শাহাদাত হোসেন বলেন, “জহিরকে একাধিকবার সতর্ক করেছি। ইউএনও স্যারকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।”ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. হারুন বলেন, “তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য। প্রশাসনকে অবহিত করেছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত উজ জামান বলেন, “এর আগেও এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের দুর্বল নজরদারি ও নির্বাচন অফিসের নীরব ভূমিকার কারণেই এসব জালিয়াতি বছর বছর বেড়ে চলেছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এই ধরনের অপরাধ আরও ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা।

