![]() |
| আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক কেন অপরিহার্য |
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী:
সবচেয়ে গভীর ও প্রয়োজনীয় সম্পর্ক হলো বান্দা ও মহান আল্লাহ তায়ালার সম্পর্ক। যিনি মানুষকে মায়ের অন্ধকার গর্ভে অসীম রহমতের চাদরে ঢেকে রেখে একের পর এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুনিয়াতে আগমনের সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধু জন্ম নয়—রক্তপিণ্ড থেকে হাড়ের সংযোজন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে তাঁর ইহসান ছড়িয়ে আছে। তাই তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও আদব রক্ষা করা প্রত্যেক বান্দার জন্য একান্তভাবে আবশ্যক।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ সত্ত্বেও মানুষ তাঁর অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকে। অথচ আল্লাহ বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সকলকেই রহমতের ছায়ায় আগলে রাখেন। পরকালে হবে চূড়ান্ত বিচার। তাই এর আগেই আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও আদব রক্ষা করে চলা মুমিনের দায়িত্ব।
আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া:
মহান আল্লাহর অসংখ্য রহমত ও নেয়ামতের বিনিময়ে বান্দার প্রথম দায়িত্ব হলো জবান ও কর্মে তাঁর প্রশংসা ও আনুগত্য প্রকাশ করা। আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন—
“যদি তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার অবাধ্যতা করো না।” (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)
কৃতজ্ঞ বান্দার প্রতি আল্লাহ আরও নেয়ামত বৃদ্ধি করেন, আর অকৃতজ্ঞের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির ঘোষণা।
“যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে (নেয়ামত) আরও দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি কঠোর।” (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)
নেয়ামতের মালিক আল্লাহ:
দুনিয়ার প্রতিটি অনুগ্রহের মালিক আল্লাহ তায়ালা। তাঁর নেয়ামত স্মরণ করা আনন্দ ও পুরস্কারের মাধ্যম। অবজ্ঞা করা হলো অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহ বলেন—
“তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।” (সুরা নহল : আয়াত ১৮)
“তোমাদের কাছে যেসব নেয়ামত রয়েছে, তা তো আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে।” (সুরা নহল : আয়াত ৫৩)
তাই বলা হয়েছে— “তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।”
(সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)
আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা:
মুমিন বান্দা জানে, আল্লাহ সর্বদা তাঁকে দেখছেন ও জানেন। এই বিশ্বাস থেকেই হৃদয়ে জন্ম নেয় ভয় ও শ্রদ্ধা। তাই সে যখনই কোনো অন্যায় করে, তখনই লজ্জিত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। এটিই প্রকৃত সুসম্পর্কের লক্ষণ।
আল্লাহ বলেন- “তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরওয়া করছ না? অথচ তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে।” (সুরা নূহ : আয়াত ১৩-১৪)
আরও বলেন—“তিনি জানেন তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর।” (সুরা তাগাবুন : আয়াত ৪)
বান্দা যদি তাঁর অবাধ্যতা পরিহার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তবেই মুক্তির পথ খুলে যায়।
“এমন কোনো জীব নেই, যে তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।”(সুরা হুদ : আয়াত ৫৬)
“আল্লাহর উপরই তোমরা নির্ভর কর, যদি তোমরা মুমিন হও।”(সুরা মায়েদা : আয়াত ২৩)
শেষ কথা:
আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দিন। অন্তরে যেন তাঁর রহমতের আশা ও ভয় জাগ্রত থাকে—আল্লাহুম্মা আমিন, ছুম্মা আমিন।
লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট
সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট।

