![]() |
| আমির হামজা হত্যা: ফরহাদ একা নয়, পরিবারের দাবি গভীর তদন্তের |
আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মাদ্রাসাছাত্র আমির হামজা হত্যাকাণ্ডে একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি ফরহাদ রেজার স্বীকারোক্তি নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার। তাদের দাবি—এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ফরহাদ একা নয়, আরও কেউ সম্পৃক্ত থাকতে পারে। তাই মামলায় অধিকতর ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জোরালো দাবি তুলেছেন শোকাহত বাবা-মা।
নিহত আমির হামজার বাবা সায়েমউদ্দিন বিশ্বাস জানান, ফরহাদের দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তিনি বলেন, “জানাজার আগে নিজ হাতে ছেলেকে গোসল করিয়েছি। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল, এমনকি একটি দাঁতও ভাঙা দেখি। শুধু শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়নি—তাকে আঘাত করেও হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ যেন এসব আঘাতের কারণ খুঁজে বের করতে গভীর তদন্ত করে।”
ফরহাদ রেজা জবানবন্দিতে দাবি করেছে, মাত্র ৫০ টাকার বিরোধে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমিরকে হত্যা করেছে। তবে এ যুক্তিতেও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। চান্দড়া নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা মো. আমিনউল্লাহ বলেন, “ঘটনার আগেই ফরহাদ হেফজ বিভাগের এক ছাত্রের নিকট ৩৫০ টাকা গচ্ছিত রেখেছিল। অর্থ থাকা সত্ত্বেও কেন ৫০ টাকার জন্য সে একজনকে হত্যা করবে—তা বোধগম্য নয়।”
নিহতের মা মরিয়ম বেগম ঘটনার একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, “যে ডোবা থেকে আমার ছেলের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকে প্রায় ১০ দিন পর ৪০০ মিটার দূরের একটি ঘাসের জমি থেকে তার টুপি, স্যান্ডেল ও একটি লাঠি উদ্ধার হয়।”
পরিবারের সন্দেহ—প্রথমে সেই ঘাসের জমিতেই আমিরকে আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ বস্তাবন্দি করা হয় এবং অন্য কারও সহায়তায় ৪০০ মিটার দূরের ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। তাদের দাবি, একজন কৈশোর বয়সী ছেলের পক্ষে একাই এত দূর মরদেহ টেনে নিয়ে যাওয়া বা বস্তাবন্দি অবস্থায় বহন করা সম্ভব নয়।
২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় চান্দড়া তা’লিমুল কুরআন মাদ্রাসা সংলগ্ন ডোবা থেকে অর্ধগলিত বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বস্তার ভেতরে ইট ভরা ছিল, যাতে লাশ পানিতে ডুবে থাকে। পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মামলার রহস্য উদঘাটন এবং ফরহাদ রেজাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, “মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। পরিবারের দাবি অনুযায়ী অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পরিবারের প্রশ্ন—“কেন, কীভাবে, কার নির্দেশে—এ হত্যাকাণ্ড?” উত্তরের অপেক্ষায় পুরো এলাকা।

