![]() |
| পবিত্র রজব মাসের ফজিলত ও করণীয় ইবাদত |
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী:
পবিত্র রজব মাস আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমার মাস। এই মাসে বান্দার গুনাহ মাফ হয়, দোয়া কবুল হয় এবং রমজানের প্রস্তুতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে রজব মাস গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
হাদিস ও ইসলামী বর্ণনায় এসেছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসেই মেরাজে গমন করেন। এটি নবুয়ত-পরবর্তী ঘটনাবলির মধ্যে সর্বাধিক বিস্ময়কর ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। এছাড়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনায় রজব মাসের গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরবি ১২ মাসের মধ্যে রজব একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাস। কোরআনুল কারিমে চারটি নিষিদ্ধ মাসের কথা বলা হয়েছে, যার একটি হলো রজব। এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। জাহেলি যুগেও আরব সমাজে রজব মাসে সংঘাত বন্ধ রাখা হতো। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে এই মাসে হানাহানি ও সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদিস শরিফে রজব মাসকে দোয়া কবুলের মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুনানে বায়হাকি শরিফে বর্ণিত পাঁচটি বিশেষ রাতের মধ্যে একটি হলো রজব মাসের চাঁদ উদয়ের প্রথম রাত। তাফসিরে কুরতুবিতে এসেছে, রজব মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন।
রজব শব্দটি জান্নাতের একটি নদীর নাম বলেও বর্ণিত হয়েছে। ওই নদীর পানি দুধের মতো সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি ও বরফের চেয়ে শীতল। যারা রজব মাসে নফল রোজা রাখবেন, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাদের এই নদীর পানি দ্বারা আপ্যায়ন করবেন—এমন ফজিলতের কথা হাদিসে এসেছে।
রজব মাসে বিশেষ কিছু নফল ইবাদতের কথাও বর্ণিত রয়েছে। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব মাসে এই দোয়া পাঠ করতেন—
“আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান।”
অর্থ: হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দিন। (মুসনাদে আহমদ)
ইসলামী বর্ণনায় রজব মাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে লাইলাতুল রাগায়িব, ১৫ তারিখের রাতকে লাইলাতুল ইস্তিফতাহ এবং ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে মেরাজ বলা হয়। শবে মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে এক মহিমান্বিত ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত।
কিছু বর্ণনায় এসেছে, রজব মাসের প্রথম তারিখে বিশেষ নফল নামাজ ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া রজব মাসের ২৭ তারিখে রোজা রাখার ফজিলতও বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এক কথায়, রজব হলো ক্ষমা, দোয়া কবুল ও আত্মশুদ্ধির মাস। এটি রমজানের প্রস্তুতির সোপান। এই পবিত্র মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া, নফল রোজা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র রজব মাসের ফজিলত ও বরকত অর্জনের তাওফিক দান করুন—আমিন।
লেখক:
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট
সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী হযরত দরিয়া শাহ (রহ.) মাজার জামে মসজিদ, সিলেট
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম, সিলেট

